ছোটবেলায় বোকাইনগর নামক এই রেল ষ্টেশনটা
পার হয়ে তারপর খেলতে যেতে হতো আমাকে।
যদিও রেলষ্টেশন ও তার আশপাশ এলাকা পরিবার কতৃক আমার জন্য তখন নিষিদ্ধ এলাকা হিসাবে ঘোষিত ছিল।
প্রতিদিন খাবারের সময় বাবা মার কত কি উপদেশ ছিল ষ্টেশনে না যাওয়ার জন্য।
কিন্তু কে শুনে কার কথা খাবারটা শেষ হলেই বাবা মার উপদেশগুলোর জায়গা হত হাওয়ার সাথে বাতাসে।
কোনোদিন সকালে খেলতে গিয়ে দেখতাম ৯টার ট্রেনে গন্তব্যে পৌছার অপেক্ষায় কত পরিচিত অপরিচিত মানুষ।
কোনোদিন দেখতাম ট্রেন চলে এসেছে কত শত মানুষ ট্রেন থেকে নামছে উঠছে। আবার কত হাজার মানুষ লোকাল ট্রেনের বুকে চরে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ ভৈরবের উদ্দেশ্য।
১৬ই ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ জাতীয় দিবস গুলোতে গৌরীপুর খেলার মাঠে কুচকাওয়াজ দেখে দেখে ৯ টার ট্রেনে গৌরীপুর থেকে বোকাইনগর ষ্টেশনে বুক ফুলিয়ে এমন ভাব করে নামতাম, যেন মানুষ আমায় দেখে ভাবে দামী গাড়ি থেকে নামছি। সেসময় আমার মুখে রাজ্য জয়ের যে হাসি লেগে থাকতো তার কথা না হয় নাই বা বল্লাম।
শনিবার ও মঙ্গলবার গৌরীপুরের সাপ্তাহিক হাটে বাড়ি থেকে নেয়া ধাড়ী বিক্রি শেষে সোজা চলে যেতাম উত্তর বাজার থেকে ষ্টেশনে, সন্ধ্যায় ভৈরব ট্রেনে ফিরে আসতাম প্রিয় বোকাইনগর রেল স্টেশনে।
সেসময় অত্যন্ত ব্যস্ত ও কোলাহল মুখর ছিল বোকাইনগর রেল স্টেশন,ছিল অসংখ্য দোকানপাট।
সময়ের পরিক্রমায় এখন আর পূর্বের সেই কোলাহল আজ থেমে গেছে, এখন আর কেও অপেক্ষায় প্রহর গুনে না ট্রেন আসার জন্য।
কারন বিচ্ছিন্ন ২/১টি ছাড়া প্রায় কোন ট্রেনেরই স্টপেজ নেই এ ষ্টেশনে। পরিত্যক্ত রেল ষ্টেশন আজ মাদকসেবিরা দখলে,নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাধারণ মানুষের তাই আনাগোনা খুব কম।
আমাদের সমবয়সী বা মুরুব্বিরা নতুন ট্রেনে উঠছে। যে ট্রেনটা ঝিক ঝিক শব্দ করেনা বা এই ট্রেনের যাত্রীরা কখনো ফেরত আসেনা। ট্রেন টা বড়ই অভিমানী সেই যে একবার নিয়ে যায় আর কখনো আমাদের প্রিয়দের নিয়ে এই স্টেশনে থামিয়ে দিয়ে যায়না।
আমিও প্রহর গুনছি এই ট্রেনটার জানিনা সেই অভিমানী ট্রেন টা আমায় কবে নিয়ে ছুটবে ঝকঝক ঝিক ঝিক শব্দটা না করে ।
লেখক;সৌদি প্রবাসী