ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু গত জানুয়ারিতে। দেশটিতে তখন সংক্রমণ বেশ কম ছিল। কিন্তু এপ্রিলের শুরুর দিকে দৈনিক এই সংক্রমণ ছিল ৫০০ থেকে ৬০০। মের শুরুতে তা ২ হাজার ছাড়ায়। জুনের শুরুতে এই সংখ্যা ৭ থেকে ৮ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু জুনের শেষে এসে তা ১৮ থেকে ২০ হাজারে পৌঁছায়। কিন্তু গত বুধবার দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। এ দিন ৩২ হাজারের বেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে সংক্রমণের হার বাড়ছে গ্রামাঞ্চলে।
করোনার সংক্রমণের দিক থেকে ভারতের অবস্থা বিশ্বে তৃতীয়। দেশটিতে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছুঁই ছুঁই। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ২৫ হাজার। আর সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
ভারতের করোনার হটস্পট ছিল কেন্দ্রশাসিত দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের মুম্বাই। এখন সংক্রমণ বাড়ছে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে স্বাস্থ্য অবকাঠামো দুর্বল। তবে যে সংক্রমণের চিত্র সরকারি হিসাবে উঠে আসছে, তা সঠিক কি না এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, দেশটিতে করোনা পরীক্ষার হার জনসংখ্যার তুলনায় বেশ কম। এই পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রত্যন্ত এলাকায় লকডাউনের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। এমন পদক্ষেপ নেওয়া ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে। বিহারের পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকায় সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছিল মৌসুমি শ্রমিকেরা ফিরে আসার পর থেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান জন ফ্লেমিং। তিনি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব যখন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তখন বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এই অঞ্চলের দিকে এখন আমাদের দৃষ্টি ফেরানো প্রয়োজন।’
ভারতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্র। এই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ। এই রাজ্যের প্রথম নারী মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নীলা সত্যনারায়ণ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া সংক্রমণ বাড়ছে কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে।
এদিকে প্রতিনিধি, কলকাতা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বিকেলে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনাযুদ্ধে শামিল হয়েছেন, তাঁরা মারা গেলে প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি দেওয়া হবে।
Source: Prothom Alo