কংগ্রেসের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না ভারতের মুসলিমরা

admin / ৯৭ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিপূজনের অব্যবহিত পরেই হায়দরাবাদের মুহাম্মদ আসাদুদ্দিন ওয়েসির বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে সবথেকে বেশি আলোচনা হয়েছে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম-এ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রেসিডেন্ট ওয়েসি টু্ইট করেছিলেন, ‘বাবরি মসজিদ থি, হ্যায় আউর রহেগি ইনসাল্লাহ।’ বাংলায় করলে দাঁড়ায় ‘বাবরি মসজিদ ছিল, আছে এবং থাকবে।’ অযোধ্যায় ভূমিপূজনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতার পর ওয়েসি আরও বহু মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যগুলিকে সমর্থন করেছে গোটা ভারতের একাধিক মুসলিম সংগঠন এবং বহু মুসলিম ধর্মীয় নেতারা।

ওয়েসি বহুদিন ধরেই ভারতীয় মুসলমানদের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু তাঁর ৫ আগস্টের উক্ত বয়ান ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় মুসলমানদের। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর যেদিন সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে তাদের রায় দিয়েছিল, সেদিনও ভারতীয় মুসলমানরা কোনও বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু ৫ আগস্ট আরএসএস এবং বিজেপি রাম মন্দির নির্মাণের ভূমিপূজন নিয়ে যেভাবে সারাদেশে রাজনৈতিক উদ্দীপনার সৃষ্টি করল, তার ফলে মুসলমানদের তরফে প্রতিক্রিয়া আসাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বিজেপির সামনে এত ভালো একটা সুযোগ ছিল রাজনৈতিক ফয়দা তোলার, তারাই বা এই সুযোগ ছাড়ত কেন?

৫ আগস্ট ভারতের ২০ কোটি মুসলিম তাই ওয়েসিকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারি হতে বাধ্য। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ এবং পরের দিন অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বর প্রত্যেকটি কাগজে যে হেডলাইন করা হয়েছিল তার অর্থ দাঁড়ায় ‘করসেবকদের হাতে ধ্বংস হল বাবরি মসজিদ।’ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইন্ডিয়া টুডে হেডলাইন করে বলেছিল এটি ‘জাতির লজ্জা।’ সংঘ পরিবার অথবা বিজেপি চাইলেও ভারতের ইতিহাস থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২-এর মতো কালো দিনকে মুছে ফেলতে পারবে না। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রশ্ন করবে, কেন ভেঙে ফেলা হয়েছিল বাবরি মসজিদ? হিন্দুরা কি সেখানে রাম মন্দিরের অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ দিতে পেরেছিল, নাকি হিন্দু মন্দিরের দাবি করা হয়েছিল শুধুমাত্র আস্থার উপর ভিত্তি করে?

রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভারতীয় মুসলমানদের কাছে ধীরে ধীরে আবার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাচ্ছিল কংগ্রেস। কিন্তু ভূমিপূজনের পর কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রা রাম মন্দিরের জন্য শুভেচ্ছা বিতরণ শুরু করলেন এবং অযোধ্যায় ভূমিপূজনকে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করলেন, তাতে কংগ্রেস সম্পর্কে ফের মোহভঙ্গ হল ভারতীয় মুসলমানদের। কংগ্রেসের মুসলিম নেতারা চেয়েছিলেন দল যেন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করে।

ভূমিপূজন একদিনেই শেষ হয়ে যাবে এবং মানুষের উদ্দীপনাও ফুরিয়ে যাবে। তাই এই ধরনের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু কংগ্রেস বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসল এবং বিজেপি যা চেয়েছিল, সেটিই শেষপর্যন্ত করল। হিন্দুদের মন জয় করতে পথে নেমে পড়ল কংগ্রেস। কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো নেতারা কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্যকে সমর্থন করলেন। এর ফলে কংগ্রেসের প্রতি আবার মোহভঙ্গ ঘটল ভারতীয় মুসলমানদের। তারা বুঝলেন বিজেপি ও কংগ্রেস একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরপর কংগ্রেস ওয়েসিকে বিজেপি এজেন্ট বললেও ভারতের মুসলমানরা সেটি আর বিশ্বাস করবে না।

ইতিমধ্যেই ওয়েসি ঘোষণা করেছেন, উনি বিহার বিধানসভার ২৪৩টি আসনে প্রার্থী দেবেন। এর ফলে মুসলিম ভোট ভাগ হবে এবং লাভবান হবে বিজেপি। মুসলমানদের সামনে আপাতত আর কোনও পথ খোলা নেই। বিজেপি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মুসলিম ভোট প্রায় অকেজো করে দিয়েছে। কিন্তু ওয়েসিকে ভোট দিলে মুসলিমরা অবশ্যই লাভবান হবেন না। মুসলমানদের উচিত নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার উপর জোর দেওয়া এবং যে কোনও রাজনৈতিক দলের অনুগামী হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত না করা। মূল ধারায় মিশে ভারতীয় মুসলমানরা নিজের লুপ্ত গরিমা ফের ফিরে পেতে পারেন। তাই এই সন্ধিক্ষণে তাদের সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে।(সৌজন্যে: পুবের কলম)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর