বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলার চরফ্যাসনের দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নের চরনুরুল আমীন গ্রামে ২২ বছরের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর অন্তঃস্বত্ত্বার ঘটনায় ১০ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর গর্ভধারণকে পুঁজিঁ করে জমিজমার বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করে ২৫ বছর বয়স দেখিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করে স্থানীয় হাফেজিয়া মাদ্রাসার ১০ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় শিশুটির বড় ভাই এবং বাবাকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি নাঈম তার প্রতিবেশি। প্রায় সময় ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখাত নাঈম। কিন্তু মেয়েটি প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। গত ২৪ মার্চ ওই তরুণীর বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে প্রতিবেশি নাঈম ও রফিক তার বাড়ি আসে। রফিককে হুজুর সাজিয়ে ওই তরুণীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ওই দিন নাঈম তাকে ধর্ষণ করে। এতে ওই তরুণী ৩ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে নাঈমের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু নাঈমের পরিবার তরুণীকে গ্রহণে অস্বীকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই তরুণী গত ১৪ আগস্ট দুলারহাট থানায় মামলা করেতে যান। থানা পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করায় তিনি আদালতের শরনাপন্ন হন।
নাঈমের বাবা আব্দুল আলী অভিযোগ করে বলেন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণী, তার গৃহকর্তা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি তছির আহমেদ পাটওয়ারী এবং আমি প্রতিবেশী। তছির পাটওয়ারীর বাড়িতে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ওই তরুণী গৃহকর্মীর কাজ করছে। তছির আহমেদ পাটওয়ারীর সঙ্গে জমিজমা নিয়ে আমার পরিবারের বিরোধ চলছে। এ কারণে আমার পরিবারকে ফাঁসাতে নিজ বাড়ির গৃহকর্মীকে ব্যবহার করে আমার ১০ বছরের শিশু ছেলেসহ আমাকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাঈম স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ছে এবং তার বসয় মাত্র ১০ বছর। মামলায় যদিও তার বয়স ২৫ বছর দেখানো হয়েছে। আদালতে মামলা দায়েরের আগে গত ২৩ জুলাই তছির আহমেদ পাটওয়ারী ও তার ভাই জামাল পাটোয়ারী তরুণীর অন্তঃস্বতত্ত্বার ঘটনায় নাঈম জড়িত এমন খবর নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন এবং চেয়ারম্যানের আদালতে পরদিন সালিশ হবে বলে জানান। নির্ধারিত দিনে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হাওলাদার আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তছির আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণী আমার বাড়িতে কখনও কাজ করেনি। তার অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এলাকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পরার পরে আমি নাঈমের বাবা আবদুল আলীর বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে আবদুল আলীর পরিবারকে ফাঁসানোর বিষয়টি সঠিক নয়।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আলমগীর হাওলাদার জানান, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর অন্তঃস্বত্ত্বার বিষয়টি তার পরিবার তাকে অবহিত করেছেন। তিনি এ ঘটনায় আইনি আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সমঝোতার জন্য নাঈমের পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা দাবির বিষয়টি মিথ্যা।
দুলারহাট থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে ওই তরুণীর পক্ষে লোকজন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন। কিন্তু সরেজমিন তদন্তে অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল খুজেঁ পাওয়া যায়নি। ১০ বছরের শিশু কর্তৃক ২২ বছরের কিশোরী অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়া অসম্ভব। এই অসঙ্গতির কারণে থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। ওই তরুণী আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশ এখনো থানায় পৌঁছেনি। আদালতের নির্দেশ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।