আজ শালীহর গনহত্যা দিবস

admin / ২৪২ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০


গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :আজ (২১ আগস্ট, শুক্রবার) শালীহর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকবাহিনী স্থানীয় আলবদরদের সহযোগিতায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে ১৪জনকে হত্যা করে। পাকবাহিনীর ভয়ে হিন্দু পরিবারের সদস্যরা সেদিন প্রথাগতভাবে স্বজনদের মরদেহগুলো সৎকার করতে পারেনি। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে মরদেহ গুলো মাটি চাপা দিয়েছিলো তাদের স্বজনরা।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন,মুক্তিযুদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সামাজি, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে।স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায় এবং আবুল হাসিমের উদ্যোগে প্রতিবছর শালীহর গ্রামে শহীদদের স্মরণসভার আয়োজন করা হতো। ২০১০ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান শহীদের স্মৃতি রক্ষায় শালীহর গ্রামের বদ্ধভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। তবে সেখানে শহীদদের কোনো নামফলক নেই। স্বজন হারানোর ব্যাথা নিয়ে এসব শহীদ পরিবারের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। আর যারা বেঁচে আছেন তারা চালিয়ে যাচ্ছেন শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির যুদ্ধ। তবে কাঙ্খিত সেই স্বীকৃতি কবে মিলবে, আদৌ মিলবে কিনা ? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো।

মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট পাকবাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে। এরপর তৎকালীন বিসকার রেলওয়ে স্টেশনের অবাঙালী স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিন এবং আল বদর কমান্ডার আব্দুল মান্নান ফকিরের নেতৃত্বে উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তান্ডব চালায় পাকবাহিনী। সেদিন গ্রামে ঢুকে পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের নারী-পুরুষরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে যে যার মতো করে দৌড়ে পালাতে থাকে। অনেকেই আশ্রয় নেয় স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতা ও মুসলমানদের বাড়িতে। বাড়ি থেকে দৌড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের মুসলমান বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন শচীন্দ্র চন্দ্র দাস।

পাকবাহিনী সেখান থেকে শচীন্দ্রকে ধরে এনে দুই হাত বেঁধে রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে । এরপর একে একে মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাস। লুটপাটের মালামাল বহনে কাউকে না পেয়ে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় নগেন্দ্র চৌকিদারকে। তারপর সেখানে আরও ৩ জন ছিল। নগেন্দ্রর চোখের সামনেই ৩ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তবে পাকবাহিনীর গুলির মুখ থেকে কলেমা পাঠ করে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান নগেন্দ্র চৌকিদার।

শহীদ পরিবারের সদস্য গীরিবালা বলেন, পাকসেনা আসার খবর পেয়ে শালীহর গ্রামের উত্তর পাড়ার এক মুসলিম বাড়িতে আমি ও আমার স্বামীর বড় বোন প্রেমাদা আশ্রয় নেই। এ সময় আশ্রয়দাতা আমাদের খর-বন ও চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখে। খবর পেয়ে পাকবাহিনী আমাদের ঘেরাও করে আটকে রাখে।

এসময় আমার শ্বশুড় কামিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকাশ্বশুড় তারিনীকান্ত বিশ্বাস, কাকীশাশুড়ী কিরদা সুন্দরীকে চোখের সামনে গুলি হত্যা করে। কিন্তু দীর্ঘ ৪৭ বছরেও আমরা কোনো স্বীকৃতি ও শহীদ পরিবারের মর্যাদা পাইনি। আমাদের অপরাধটা কোথায়?

শহীদ মধুসূদন ধরের ছেলে সুপ্রিয় ধর বাচ্চু বলেন, শালীহর গ্রামের কয়েকটি জায়গায় হত্যাযজ্ঞ হলেও জ্ঞানেন্দ্র করকে যেখানে পাকসেনারা হত্যা করেছিল সেই জায়গাটি শনাক্ত করে বদ্ধভূমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। তবে এতে গণহত্যার শহীদদের কোন নাম পরিচয়ের তালিকা রাখা হয়নি। সংস্কারের অভাবে বদ্ধভূমিটি গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। যেনো দেখারও কেউ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর