বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর অধিন ময়মনসিংহের কেওয়াটখালিস্থ ১৩২/৩৩ পাওয়ার গ্রিডে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে পরপর ভয়াবহ ২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। ৮ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে গ্রিড ষ্টেশনের ৩ টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ২ টি ট্রান্সফরমার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারনে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে ময়মনসিংহ অঞ্চল। ঢাকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞ টিম প্রায় ১০ ঘন্টা চেষ্টার পর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে সক্ষম হলেও তা ছিল চাহিদার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ২টি ট্রান্সফরমার মেরামত বা রিপ্লেস না হওয়ায় চাহিদার তুলনায় মাত্র ৩ভাগের ১ভাগ বিদ্যুৎ রেশনিং করে বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হচ্ছিল।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক বিপিডিবির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সংস্কার ও প্রতিস্থাপনের জন্য চুক্তিবদ্ধ। এনার্জিপ্যাক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফরমার গুলো তাদের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে তা সংস্কার বা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পূর্বেই ১০ সেপ্টেম্বর সকালে রহস্যজনক ভাবে পুনরায় অগ্নিকাণ্ডের মুখে পততি হয় অবশিষ্ট একমাত্র ট্রান্সফরমারটি। ফায়ারসার্ভিস দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার ফলে ট্রান্সফরমাটি রড়রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেও সংলগ্ন কন্ট্রোল রুমে অবস্থিত সার্কিটব্রেকারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া দু-দুটি অগ্নিকাণ্ডের ফলে অস্বাভাবিক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অত্যন্ত মূল্যবান ক্যাবল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।এমনকি অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পায়নি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল গুলোও ৷
৮ সেপ্টেম্বরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গ্রহন করে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা বুধবার দুপুরে সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত কাজ শুরু করলেও রিপোর্ট প্রদানের ১ দিন বাকী থাকতেই পুনরায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা সংগঠিত হল।
মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে জনগনের প্রবেশ নিষিদ্ধ স্পর্শকাতর, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সংযুক্ত রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারছেনা সচেতন জনগন৷তারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটিকে দ্বায়িত্বে অবহেলাসহ ষড়যন্ত্র বলে অবহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করছে৷
বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেওয়াটখালি গ্রিড এলাকায় উপকেন্দ্রের আশপাশের বসবাসকারীরা চরম আতঙ্কিত অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।তাদেরও অভিযোগ পরপর ঘটে যাওয়া এধরনের ঘটনা কী নিছক দুর্ঘটনা না দায়িত্বে অবহেলা তা উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
ময়মনসিংহ নগরীর অনেক সচেতন মানুষের ধারনা, বিশেষ কোন হীনস্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী কোন মহল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। যে কারনে জাতীয়ভাবে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারন জানার দাবী জানিয়েছেন তারা৷ চেয়েছেন জেলার সচেতন মানুষ।
সচেতন জনগণের দাবি নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কারন গত ৮ সেপ্টেম্বর সংগঠিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারন চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হত তবে নতুন করে দুর্ঘটনাটি হয়তো এড়ানো সম্ভব হত। যেকারনে ৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর বিপিডিবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসিনতা ও অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অদক্ষ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে পরপর এঘটনা ঘটছে কিনা তাও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।
যদিও পিডিবির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইন্টেন্যান্স) মাসুম আলম বকশীর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। তবে বিপিডিবি ময়মনসিংহ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণাধীন একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে উক্ত তদন্ত্র কমিটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান একটি প্রতিষ্ঠানের তদন্ত্র করার সক্ষমতা কতটুকু আছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকে যাবে।
যে কারনে, এই ঘটনায় জাতীয়ভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সাথে কারো অবহেলা বা এটি ষড়যন্ত্রের কোন অংশ কিনা তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন অত্যন্ত জরুরি।
@ ইকবাল হোসেন জুয়েল,
সম্পাদক
সাপ্তাহিক রাজগৌরীপুর ও রাজগৌরীপুর ডটকম