আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ দমনে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদের দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিস্কারসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে দলের কোনো পদ-পদবিতেও আসতে পারবেন না তারা। এমনকি অতীতেও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জিতেছিলেন, তাদেরও এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।
বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফ হোসেন দুদু, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নজরুল ইসলাম এবং কুড়িগ্রাম পৌরসভায় পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু। এ ছাড়া রাজশাহীর কাঁটাখালীতে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সামা, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব এবং পুঠিয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম টিপু বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও বাছাইকালে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
বিদ্রোহ করায় বদলে যাচ্ছে প্রার্থী: অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কারণে এবার পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না অনেক প্রার্থীই। এমনকি আগের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসা মেয়ররাও দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন। এই কারণে এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ২৫ পৌরসভার নির্বাচনে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও তিনজন প্রার্থী বদলের ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছিলেন বলে দলীয় নীতিনির্ধারকদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বাদ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভায় মেয়র পদে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে। পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ আসে, রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। কিন্তু হারলেও বিদ্রোহী হওয়ার অপরাধে তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। একইভাবে নেত্রকোনার মদন পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী বদলের ঘটনা ঘটে। সেখানে প্রথমে বর্তমান মেয়র আবদুল হান্নান তালুকদার শামীম মনোনয়ন পেলেও পরে তাকে বাদ দিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আবদুল হান্নান তালুকদার গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। মনোনয়ন পরিবর্তন করা হয়েছে কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায়ও। প্রথমে আল মাছুম মুর্শেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে বাদ দিয়ে এখন প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান মেয়র তারিকুল ইসলামকে। আল মাছুম মুর্শেদ গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে: আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, প্রথম ধাপের মতো পরবর্তী ধাপের পৌরসভা নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এমন কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষিত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৬১টি পৌরসভার দলীয় মেয়র প্রার্থী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। গত শুক্রবার দলের আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এসব প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। আর তৃতীয় ধাপের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় আরও ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায়ও একই মনোভাব থাকবে দলের।
তারা আরও বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বা হবেন তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থিতা অব্যাহত রাখলে তাদের অবশ্যই দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিস্কার, ক্ষেত্র বিশেষে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা আগামীতে আর কখনোই দলের মনোনয়ন পাবেন না। ভবিষ্যতে দলের কোনো পদ-পদবিতেও আসতে পারবেন না। তবে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দলের নির্দেশ মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে তাদের পরবর্তীতে অন্যান্য জায়গায় মূল্যায়ন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক গনমাধ্যমকে বলেছেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদের আর কখনও নৌকায় চড়তে দেওয়া হবে না। দলের পদ-পদবিতেও থাকতে পারবেন না। তাই যারা এখনও বিদ্রোহী হিসেবে রয়েছেন তাদের এই অবস্থান থেকে সরে দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।
দলের সভাপতিমণ্ডলী ও মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চাইলে তিনি নিজের কপাল নিজেই পোড়াবেন