সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানিয়েছেন।
আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে আশানুরূপ মিল পাওয়া যায়নি।
বর্ষা মৌসুমে রোববার রাতে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। মঙ্গলবারও একই অবস্থা হয়, সড়কে পানির ঢেউ দেখে কেউ কেউ রসিকতার ছলে প্রশ্ন করেন, কোন নদীর উপর দিয়ে যাচ্ছেন তারা?
এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন দপ্তর-বিভাগের গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ে বুধবার মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষ থেকে অনলাইনে সভার আয়োজন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
জুমে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়র তাপস ছাড়াও ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও অংশ নেন। ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বাভাবিক উপায়ে পানি বের করতে না পারায় পাম্পিং করে পানি বের করা হচ্ছে বলে জানায়।
রাতে থেকে ভোর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে সোমবার তলিয়ে যাওয়া মিরপুর রোডে চলাচল হয় ব্যাহত।তাদের বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, পাম্পিং হাউজগুলো সম্পূর্ণ কার্যকর নয়।
মন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাই আমাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্তমান এই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী সংস্থাগুলোর সংস্থা-প্রধান ও প্রতিনিধিবর্গ যে সকল তথ্য দিয়েছেন, সে তথ্যগুলো পুরোপুরি সঠিক নয়। প্রয়োজনে আপনি সহকারে আমরা এখনই পরিদর্শনে যেতে পারি। সভায় যে সকল তথ্য-উপাত্ত সেবা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো হতে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর সত্যতা আমরা সরেজমিনে যাচাই করতে পারি।
“আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, উপস্থাপিত তথ্যগুলো সঠিক নয়। সেটি আমরা সরেজমিনে স্পটে গিয়ে প্রমাণ করতে পারব।”
বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া ওই বৈঠক আড়াইটায় শেষ হওয়ার পর কর্মকর্তাদের নিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর, ২২ নম্বর ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খাল ও পাম্প স্টেশন পরিদর্শনে যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও মেয়র তাপস।
“খালগুলো ময়লা-আবর্জনা জমে নিশ্চল-নিথর হয়ে পড়ে থাকায় ও পাম্প হাউজের নিশ্চলতা দেখে উপস্থিত সকলেই হতাশা প্রকাশ করেন,” বলেন দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।
এরপর সবাই সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিল স্লুইস গেইট পরিদর্শনে যান। সে সময় স্লুইস গেট কবে থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে জানানো হয়, গত ১৩ জুলাই থেকে খোলা রয়েছে।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে মন্তব্য করে এ দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার অনুরোধ করেন মেয়র ফজলে নূর তাপস।
অনলাইন সভায় তিনি বলেন, “ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপর অর্পিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা সে দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্ব আমাদেরকে দিন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এই ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব।”
এ সময় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ২য় তফসিল ও ৩য় তফসিলের বিভিন্ন বিধি, ধারা ও উপধারা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, “সিটি কর্পোরেশন তার আওতাভুক্ত এলাকায় পানি নিষ্কাশন, জলাধার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে দায়বদ্ধ। কিন্তু দীর্ঘদিন ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাধার সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পানি নিষ্কাশনসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের সেই দায়িত্ব নিজেদের আওতায় রেখে দিয়েছে। আইন অনুযায়ী তারা আমাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছে না কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনও করছে না।
“ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলেই বছরের পর বছর এই ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী দায়িত্ব আমাদের কাছে হস্তান্তর করুন, আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। দায়িত্ব নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে, ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেব।”
খাল ও পাম্প হাউজ পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে এ বিষয়েও জবাব দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
“যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলা হয়েছে মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে।
“ঢাকা অফিস”