বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা যেভাবে তথ্যের ব্যবহার করেছে, করছে তার সবটায় কৌশলের বিষ মেশানো। এই লেখার আলোচনা তাদের সেই ‘কৌশল’ নিয়ে।
আল-জাজিরা বাংলাদেশকে নিয়ে যে প্রতিবেদনগুলো (ভিডিও/লিখিত) করেছে, তার প্রতিটি সেকেন্ডে, লাইনে ওই কৌশলের খেলা। কিছু তথ্য, কিছু ধোঁয়াশা, কিছু সত্য, কিছু অসত্য (মিথ্যা নয়)! আপনি সেসব অস্বীকার করতে পারবেন; কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
আল-জাজিরা তাদের আলোচিত ভিডিওতে অধিকাংশ দাবির ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিকে উৎস ধরেছে, তাকে নিজেদের প্রতিবেদনেই তারা ‘সাইকোপ্যাথ’ বলছে। মানে মানসিকভাবে আনফিট। এমন একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নিজের মনের রং মিশিয়ে ভয়ংকর কিছু কথা বলেছেন।আল-জাজিরা সেসব ‘অনুসন্ধানী তথ্য‘ হিসেবে প্রচার করেছে! সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাতে চাইছে।
সব দাবি, সব সময় সংবাদ হয় না-এ কথা আলজাজিরার সাংবাদিকেরা নিজেরাও জানেন। তবু কেন তারা ‘সাইকোপ্যাথকে (তাদের বক্তব্য অনুযায়ী)’ উৎস ধরে খবর প্রচার করল। কারণ অন্য কোনো উৎস থেকে তারা তথ্যগুলোর সত্যতা বের করতে পারেনি। আল-জাজিরা নিশ্চয়ই চেষ্টা করেছে ওই ব্যক্তির বলা কথাগুলো আরো নানাভাবে, নানা দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু তারা পারেনি। শেষ পর্যন্ত এক ব্যক্তির কথা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে শিরোনাম করেছে।
আল-জাজিরা প্রতিবেদনটি করতে অনেক সময় নিয়েছে। ভিডিও দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় একাধিক মানুষ কাজ করেছে। তাদের আয়োজন ছিল হলিউড সিনেমার শুটিংয়ের মতো। তারা ড্রোন ক্যামেরাও ব্যবহার করেছে। ভিডিওতে গ্রাফিক্সের কাজ, এডিটিং বিশ্বমানের। এগুলো তারা করেছে প্রতিবেদনটি বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরতে। যাতে দর্শকেরা চমকে যান, মারদাঙ্গা ছবির শিহরণ অনুভব করেন, গোটা বিষয়টি নিজেদের অবচেতন মনে দেখতে পান। আল-জাজিরার খেলাটা এখানেই।
প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ওই ভিডিওর ব্যক্তি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রমাণ হিসেবে আল-জাজিরার কাছে কোনো বিকল্প নেই। সেটি নেই বলেই দর্শকদের শিহরণে ডুবিয়ে অন্য কিছু ভাবার সময় তারা দিতে চায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটিতে কোনো ‘ব্রিদিং স্পেস’ রাখা হয়নি, যেখানে দর্শক সত্য সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হতে পারেন।
ইসরায়েল থেকে আড়িপাতার যে যন্ত্র কেনার কথা বলা হয়েছে, সেখানেও বিভ্রান্তি। যাকে তারা উৎস হিসেবে ধরেছে, সেই তিনিও স্পষ্টভাবে ভিডিওতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের ক্রেতা, সেটি আমি বলতে পারি না।’
যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে ভিডিওতে, সেখানেও ইসরায়েলের নাম নেই। আছে হাঙ্গেরির। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বুধবার বিবৃতিতে দাবি করেছে, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরির একটি কোম্পানি থেকে ক্রয়কৃত সিগন্যাল সরঞ্জামাদিকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ইসরায়েল থেকে আমদানিকৃত মোবাইল মনিটরিং প্রযুক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।’ আমরা এই কথাও আপনাকে বিশ্বাস করতে বলছি না। ভিডিও দেখলে সন্দেহের জায়গা বুঝতে পারবেন।
আল-জাজিরার দেখানো কাগজে হাঙ্গেরি লেখা, কিন্তু ভয়েসওভারে বলা হয়েছে ইসরায়েল থেকে কেনা। ব্যাকগ্র্যাউন্ড ভয়েসে এই যে বলা হচ্ছে ইসরায়েল থেকে কেনা, তারও কিন্তু বিকল্প কোনো প্রমাণ ভিডিওতে নেই।
তাহলে প্রশ্ন হলো আল-জাজিরার প্রতিবেদনের শক্তি কোথায়? একটা জায়গায় শক্তি আছে। প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় একজন কর্মকর্তা, ‘পলাতক’ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন-এই তথ্যটুকুই শুধু এই প্রতিবেদনের শক্তি। এ বিষয়ে তারা আলাদা নিউজ করতে পারতো, সেটি না করে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে বাংলাদেশকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ প্রমাণ করতে চেয়েছে। এর পেছনে যারা রয়েছেন, তারা সবাই চিহ্নিত ব্যক্তি।
ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে দণ্ডিত একজন অপরাধী। জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি ছদ্মনামধারী) মাদকাসক্তির অপরাধে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত একজন ক্যাডেট। তাসনিম খলিল অখ্যাত নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক, গুজব ছড়ানোর জন্য যার কুখ্যাতি পুরোনো।
বিশেষ ভাবে লক্ষনীয় যে সাংবাদিকতায় যে কোন প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বক্তব্য থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব না হলে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়,যা উক্ত প্রতিবেদনে দৃষ্টিগোচর হয়নি। যে কারনে প্রতিবেদনটির সত্যতা নিয়ে সাধারন মানুষের কাছে না হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তা কৌশলী সাংবাদিকতার এক অনবদ্য পরিবেশনা মনে করাই স্বাভাবিক।।