আনোয়ার হোসেন শাহীনঃ
১৯৬৪ সনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর কলেজ প্রতিষ্ঠাগ্লনে অনেকের মতো যিনি তার সোনার হার দান করে কলেজ প্রতিষ্ঠায় শরিক হয়ে ছিলেন। তিনি হলেন গৌরীপুর উপজেলা পালান্দর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, রিলিফ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের মেয়ে মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম । অনেক দিন তার দানের বিষয়টি কলেজ সংরক্ষণ ছিল। বর্তমানে এ বিষয় কোন রেকর্ড প্রমান পত্র নেই। কলেজের নানা বিষয় কালের গর্ভে আজ হারিয়ে গেছে। সে সময়ের কথা জানতে নূরুন্নাহার বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি সে দিনের কথা বর্ণনা করে বলেন, ১৯ ৬৪ সনে আমি খুব ছোট ছিলাম। হাটশিরা প্রাইমারী স্কুলে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী। আমার বাবার কাছে শুনেছি গৌরীপুর কলেজ নাই, জমিদার বাড়ীতে কলেজ করবে। অামি বলি বাবা কলেজ কি? তিনি তখন বলেন, এখানে লেখাপড়া করা যাবে, লেখা পড়া করতে ছাত্র ছাত্রীরা দূরে যেতে হবে না। বাবা বলেন কলেজ প্রতিষ্ঠায় যার যে রকম সাধ্যনুযায়ী দান করছে তুমিও কিছু দান করবা না কি? আমি কিছু না ভেবে বলে ফেলি বাবা আমার গলার স্বর্ণের হারটা দান করবো। বাবা বলেন ঠিক অাছে তাই করো। এর পর প্রায়ই বাবাকে বলি সোনার হারটা নেও। বাবা বলেন, তোমার হার তুমি নিজ হাতে দান করবে।কলেজে বড় আনুষ্ঠান হবে সে দিন তোমাকে নিয়ে যাবো।এর পর বেশ কিছুদিন বাবাকে রিরক্ত করে বলি কবে অনুষ্ঠান হবে। আমি কলেজ দেখবো, আমাকে নিয়ে যাবে এর কয়েক দিন পর অনুষ্ঠান হয়। সে দিন তিনি আমাকে কলেজে নিয়ে যান। সুন্দর জমিদার বাড়ী ঘুরে ঘুরে দেখি।বাবা বলেন এখানে জমিদাররা থাকতো তারা চলে গেছে। এখন এখানে কলেজ হবে,লেখাপড়া হবে।সে দিনটির বার তারিখ মনে নেই। তবে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে ছাত্ররা কলেজের সাইনবোর্ড টানিয়েছিল। অনুষ্টানে অনেকে বক্তব্য রাখেন। এক সময় আমাকে বলা হল প্রধান অতিথির কাছে সোনার হার জমা দিতে, আমি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে আমার ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের হার দান করি। এ সময় উপস্থিত সবাই হাত করতালি দিতে থাকে।সে দিনের অনুষ্ঠানের অামার ছবি তোলে ছিল।পত্রিকা ছাপা হয়ে ছিল। বাড়ীতে পত্রিকা নিয়ে বাবা দেখিয়ে ছিলেন।আবার অনুষ্ঠানের ছবি প্রিন্সপালের কক্ষে টানানো ছিল। তিনি আরো বলেন,কলেজ প্রতিষ্টায় আমার বাবা প্রিন্সিপাল মিজবা উদ্দিনের হাতে অনেক টাকা তুলে দিয়েছেন। আমি আমার সোনার হার দান করেছি। দুর দুরান্ত থেকে অনেক ছাত্র আমাদের বাড়ীতে লজিং থেকে লেখাপড়া করেছে। এই ত্যাগের মুল্যায়ন হিসেবে অন্তত নামটা অনার বোর্ডে লিপিবদ্ধ রাখার দাবী করছি। সে সময় কলেজে কোন অনুষ্ঠান হলে মিজবা ভাই দাওয়াত পত্র দিতেন। কলেজ প্রিন্সিপাল মিজবা উদ্দিন চলে যাওয়ার পর এ সব স্মৃতি মুছে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে গৌরীপুর সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিল্টন ভট্টাচার্য বলেন,পূর্বে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা দাতাদের তালিকা সংরক্ষণ করেননি বিধায় অাজ এর কোন প্রমাণ পত্র নেই।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠায় এ অঞ্চলের একমাত্র ছোট্ট বালিকা নিজের গলার স্বর্ণের হারটুকু দান করে অনন্য নজির স্থাপন করে ছিল। আমাদের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্টান প্রতিষ্ঠালগ্নে দান,অনুদান, চাঁদার তুলে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। ইতিহাসকে মুছে ফেলা যাবে না। অনার বোর্ডে ডোনার হিসাবে নুরুন্নাহারসহ ডোনারদের নাম লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা উচিৎ। গৌরীপুর কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, রিলিফ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন ১৯৮৪ সনে মৃত্যুবরণ করেন ।নূরন্নাহারের বেগম (৬৬) বর্তমানে ঈশ্বরগঞ্জ শর্শী গ্রামে স্বামী অবসর প্রাপ্ত তহসীলদার আঃ হাসিম ভূইয়া ও ছেলে নাজমুল ইসলাম ভূইয়া হিমেলকে নিয়ে সুখের সংসার।
কালের আবর্তে সংরক্ষণের অভাবে অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায়। পিতা ও কন্যা শিশুর শিক্ষা ক্ষেত্রে উপলব্ধি, অবদান ভূমিকাকে সন্মান জানানোর কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য বিষয়টি কলেজ কতৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।