রায়হান উদ্দিনঃ উত্তর ময়মনসিংহের প্রাচীন জনপদ গৌরীপুর উপজেলা , ঐতিহাসিক কারনে যা রাজগৌরীপুর নামে সমাদৃত । উক্ত উপজেলার বোকাইনগরে ৭টি ঐতিহাসিক নির্দশন রয়েছে। ৭টি ঐতিহাসিক নির্দশনের মধ্যে ১টি নির্দশন হলো- বোকাইনগরের গোসাই বাড়ির মন্দির । গভর্নর মুর্শিদকুলি খান অধীনে ঢাকা বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৭০০ সালে শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরী সেই সময়ের মোমেনসিং পরগণার বন্দোবস্থ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ও নবাব মুর্শিদকুলী খানের খুবই আস্থাভাজন। মোগল সম্রাট ও নবাবের কাছ থেকে ’রায় চৌধুরী’ উপাধি গ্রহণ করে শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরী নিশান টাঙ্গিয়ে পাঁচশত সৈন্য নিয়ে বোকাইনগর দুর্গের রক্ষকের নিকট আসেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্যে নবাবের আদেশ পত্র জমা দেন। বোকাইনগরে এসে প্রথমে রাজবাড়ি তৈরী করেন যার নাম হয় বাসাবাড়ি।বোকাইনগরের মােঘল আমলের ছােট ছােট ইটের তৈরি কালীবাড়ি মন্দিরের পূর্ব দিকে জমিদার শ্রীকৃষ্ণ রায় চৌধুরী ১৭১৩ সালে গোসাই বাড়ির মন্দির স্থাপন করেন। তথ্যসূত্র :- ২১শে ও বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত সাবেক সচিব ও প্রত্নতত্ত্ববিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ১৯৮২ সালে গৌরীপুর এসেছিলেন।প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছেন এবং আমাদের অতীতকে জানার সুযােগ করে দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’
তার বিখ্যাত বইয়ের ৫৭৫ পৃষ্ঠায় বোকাইনগর কালীবাড়ির মন্দিরের কথা যেভাবে বর্ননায় করেছেন— মােঘল আমলের ছােট ছােট ইটের তৈরি এ মন্দিরে এত মেরামতের কাজ হয়েছে যে এর আদিরপ কী ছিল, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে যতটুকু মনে হয় এটি ছিল সাদাসিধাভাবে তৈরি একটি ছােট মন্দির। বর্তমানে (১৯৮২ খ্রিঃ) এর উপরে আছে।
সমতল ছাদ এবং এই ছাদ যে পরবর্তীকালের, তাতে কোন সন্দেহ নেই।মন্দিরের ভিতরে আছে শ্রীকৃষ্ণের প্রস্তরমূর্তি। বিগ্রহের সেবায়েতকে চিরকুমার থাকতে হয়। মন্দির গাত্রে যে ইষ্টকলিপি আছে, তা থেকে জানা যায় যে মন্দিরটি ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে একজন হিন্দু জমিদার কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। মন্দির ও বিগ্রহের জন্য প্রচুর দেবােত্তর সম্পত্তি ছিল।
গৌরীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী
২.২১ কেল্লা বােকাইনগর গ্রামের গােসাইবাড়ি
বােকাইনগর গ্রামের বাসাবাড়ির জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী গােসাই বাড়ি নির্মাণ করেন। তাদের কূল দেবতা শ্রী শ্ৰী মদন গােপাল রায় বিগ্রহের পূজা অর্চনার জন্য ইতিহাস প্রসিদ্ধ কেল্লা বােকাইনগর গ্রামের কালীবাড়ী নামক স্থানে এই গােসাই বাড়িটি নির্মাণ করেন। উক্ত জমিদার এই গােসাই বাড়ির মদন গােপাল বিগ্রহের নামে ১১ একর ৪০ শতাংশ জমি দেবােত্তর করে দেন। সুরম্য প্রাসাদ বহুল এই গােসাই বাড়িতে দেশ-বিদেশের বহু সাধু সন্ন্যাসী ও বৈষ্ণবরা আসতেন। আগত সাধু সন্ন্যাসী ও বৈষ্ণবদের থাকা ও খাওয়া-দাওয়া বিনা পয়সায় এখানে হতাে। এই গােসাই বাড়িতে প্রত্যহ নিয়মিত রাধা-কৃষ্ণ এবং নারায়নের সেবা পূজা হতাে। আট জন গােসাই এর অবস্থান গােসাই বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হবার পর এই গাসাইবাড়িতে মােট (৮) আট জন গােসাই এখানে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করেন। এই গােসাই বাড়ির প্রথম গােসাই ছিলেন- মহস্ত মাধব স্মরণ গােস্বামী। দ্বিতীয় গােসাই ছিলেন- উদয় প্রসাদ গােস্বামী। তৃতীয় গােসাই ছিলেন- লসমন নারায়ণ গােস্বামী। চতুর্থ গােসাই ছিলেন- রাধিকা দাস গােস্বামী। পঞ্চম গােসাই ছিলেন- মাথুরা দাস গােস্বামী। ষষ্ঠ গােসাই ছিলেন- লক্ষ্মী নারায়ন গােস্বামী । সপ্তম গােসাই এর নাম জানা যায়নি। গােসাই বাড়ির অষ্টম গােসাই ছিলেন- উদ্যব প্রসাদ গােস্বামী। কয়েক বৎসর আগে তিনি মারা গেলে আর কোন গােসাই এ গােসাই বাড়িতে আসেনি। এসব গােসাইরা মদন গােপাল বিগ্রহের নিয়মিত সেবা পূজা করতেন। এসব গােসাই বা গােস্বামীরা রামগােপালপুর ও গৌরীপুরের জমিদারদের কুলগুরু ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই গােসাই বাড়িতে আর কোন গােসাই না আসাতে প্রয়ােজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে গােসাইবাড়ির মদন গােপাল বিগ্রহের প্রতিমা বিনষ্ট হয়েছে। ইতােমধ্যে গােসাইবাড়ির বড় বড় অট্টালিকা এবং বাউন্ডারি দেয়ালের ইট, মূল্যবান কাঠ, টিন, গাছপালা, পুকুরসহ বহু মূল্যবান সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে । বর্তমানে এই বাড়িটি বন-জঙ্গলে পরিণত হয়ে ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। বােকাইনগর গ্রামের গােসাই বাড়ী গৌরীপুর (বােকাইনগর) গ্রামের গােসাই বাড়ী
সুত্র-গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী– লেখক প্রফেসর (অব.) কাজী এম.এ মােনায়েম