নিরব এই ঘাতক নিয়ে সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। চলুন জেনে নিই এইডস নিয়ে এমন ১১টি ভুল ধারণা-
আক্রান্তদের সাথে সাধারণ মেলামেশা
এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। ২০১৬ সালেও যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষের ধারণা ছিল এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু একই বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, একই পাত্রে খাবার খেলে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহার করলে, তার ব্যবহৃত টয়লেট শেয়ার করলেও বাকিরা এইচআইভিতে আক্রান্ত হবেন না।
এইচআইভি পজিটিভ হলেই এইডস হবে
আমাদের ধারণা এইচআইভি পজিটিভ হওয়া মানেই এইডস হওয়া। মূল কথা হলো- এইচআইভি ইনফেকশন থেকে এইডস হয় ঠিকই, কিন্তু এর মানে এই নয় যে এইচআইভি পজিটিভ হলেই এইডস হবে।
এইচআইভি পজিটিভ হলে সুস্থ সন্তান জন্ম দান সম্ভব নয়
একটি ধারণা প্রচলিত আছে, এইচআইভি পজিটিভ হলে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা এমন কোনো গ্যারান্টি দিতে পারেন না যে, সন্তানের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াবে না। আবার চিকিৎসকরা এটাও বলেন, এইচআইভি পজিটিভরাও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন।
এইচআইভি পজিটিভ মানেই মৃত্যু
আমাদের ধারণা এইচআইভি পজিটিভ মানেই মৃত্যু অবধধারিত। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা আর সাবধানতার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু এড়ানো অনেকাংশেই সম্ভব বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এইচআইভি পজিটিভ কোনো বড় সমস্যা নয়
অনেকেই মনে করেন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এইচআইভি পজিটিভ কোনো বড় সমস্যা নয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভুল ধারণার ফলে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
এইচআইভি পজিটিভ হলে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই
অনেকেই ভাবেন, যদি দুজন পার্টনারের এইচআইভি পজিটিভ হয় তাহলে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। মনে রাখা বাঞ্চনীয় সব এইচআইভি স্ট্রেইন এক রকম হয় না। এক সঙ্গে একাধিক স্ট্রেইনে আক্রান্ত হলে জটিলতা বাড়ে। যাকে বলা হয় সুপারইনফেকশন।
মশার দ্বারা ছড়াতে পারে এইচআইভি
আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ে যদি অন্যদের কাউকে সেই মশা কামড়ায় তাতে এর জীবাণু ছড়ায় না। রক্ত দানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। কিন্তু মশা আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে সেই রক্ত আরেকজনের শরীরে ঢুকিয়ে দিতে পারে না। এছাড়াও মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময়ই বেঁচে থাকে।
এইচআইভি ইনফেকশন মুখ দেখে বোঝা যায়
এখনও অনেক সমাজে প্রচলিত আছে কারও এইচআইভি ইনফেকশন আছে কি না তা মুখ দেখে বোঝা যায়। অথচ এই ইনফেকশনের সাধারণত কোনো লক্ষ্মণ থাকে না। তাই মুখ দেখে বোঝা যাওয়ার ধারণাটি ভ্রান্ত।
হেটরোসেক্সুয়ালদের নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই
আমরা জানি সমকামীদের মধ্যেই এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। আবার সারা বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্তদের ৭৮ শতাংশ সমকামী ও ২৪ শতাংশ হেটরোসেক্সুয়াল। তাই শুধু সমকামীরাই আক্রান্ত হতে পারে এই ধারণা একেবারেই ভুল। অন্যদের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে।
পিআরইপি নিলে আর কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই
পিআরইপি নিলে আর কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই অনেকেই এমনটা ভাবেন। কিন্তু প্রি এক্সপোজার প্রফিলেক্সিস এক ধরনের মেডিকেশন যা এইচআইভি ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া রুখতে সাহায্য করে। তবে পিআরইপি, যৌন সম্পর্কের সময় এইচআইভি সংক্রমণ রুখতে পারে এমন কোনো প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পাননি।
এইচআইভি টেস্ট নেগেটিভ আসলে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই
এইচআইভি টেস্ট নেগেটিভ এলে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই অনেকেই এমনটা মনে করেন। কিন্তু সদ্য এইচআইভিতে আক্রান্ত হলেই তা পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। অন্তত তিন মাস সময় লাগে ধরা পড়তে। তাই এইচআইভি নেগেটিভ মানেই কনডম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই এই ধারণাটা সঠিক নয়।