সব হত্যার বিচার করতে হবে – ভলকার তুর্ক

publisher / ১৭ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ কোনো হত্যার দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি হত্যার তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
বুধবার ৩০ অক্টোবর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক দুদিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভলকার তুর্ক সাংবাদিকের সঙ্গে নানা পর্যায়ের আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
৫ আগস্টের আগে–পরে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ সর্বত্র যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি।

‘মব জাস্টিস’ (দলবদ্ধ সহিংসতা) এবং যেকোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তি সমর্থন করে না জাতিসংঘ। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর অনেক স্থানে ‘মব জাস্টিস’ হয়েছে। মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারপ্রক্রিয়াকে অবশ্যই টেকসই হতে হবে।

আন্দোলনের সময় পুলিশ হত্যার ঘটনায় দায়মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন,
কোনো হত্যার দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। প্রতিটি হত্যার তদন্ত ও বিচার করতে হবে। না হলে মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা বঞ্চনার শিকার হয়ে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে ইতিহাসের অনন্য এই নজিরবিহীন মুহূর্ত সৃষ্টি করেছে। দেশে যথেষ্ট বৈষম্য, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার ছিল তাদের মূল দাবি।

ভলকার তুর্ক  আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে জানিয়েছে যে তাদের বক্তব্য প্রকাশের জন্য রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এবার ন্যায়বিচার হতে হবে। এবারের সংস্কার অবশ্যই টেকসই হতে হবে, যেন গত কয়েক দশকের অপমানজনক চর্চার পুনরাবৃত্তি না হয়।

বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা দায়ের হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে টুর্ক বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক–প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে মামলা করা যায় না। এ বিষয়টির সুরাহা হওয়া জরুরি। এ জন্য তো একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। অতীতে যা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি চাই না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।’

ভলকার তুর্কের মতে, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু আওয়ামী লীগের সদস্য বা সমর্থক বলেই যেন তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা না হয়।

ভলকার তুর্ক ফৌজদারি অপরাধের বিচার নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে অভিযোগগুলো যাতে তাড়াহুড়া করে আনা না হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ সর্বত্র যথাযথ প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু বিচারের মান বজায় রাখা হয়, তা নিশ্চিত করাটা জরুরি।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক হত্যার অভিযোগসহ কিছু অভিযোগ যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতের দৃষ্টান্তের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আমি দেখেছি যে অন্তর্বর্তী সরকার অতীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যধারার সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন ছিল। আমার দপ্তর আইসিটি আইন সংশোধন, এটিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং সুষ্ঠু বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপস না করে ন্যায়বিচার প্রদানের বিষয়ে মন্তব্য করেছে। আমরা অন্যান্য বিকল্পের দিকে নজর দেব, যাতে আমরা বিচারের প্রক্রিয়াটিকে সমর্থন করতে পারি। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার নিয়েও জনসমক্ষে আলোচনা হবে।’

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি এবং ছাত্রলীগকে সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ সৃষ্টি হবে জানতে চাইলে ভলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশে যে ক্ষত হয়েছে, তা পূরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ সৃষ্টিতে তার সমাধান আসতে হবে অভ্যন্তরীণভাবে। আর এ জন্য দরকার জবাবদিহি বা ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। আর অতীতের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে মানবাধিকার চর্চা করতে হবে।

সন্ত্রাস দমন নিয়ে ভলকার তুর্ক বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। যেভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক মতের অমিল ছিল। যেমন নেলসন ম্যান্ডেলাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসী হিসেবে এক পক্ষ চিহ্নিত করেছিল।

৫ আগস্টের আগে–পরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অনেক বড় পরিবর্তন লক্ষ করেছি। পরিবর্তন লক্ষ করেছি মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণে। এখন এখানে আলোচনা ও বিতর্ক দেখা যায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমি আশা করি, এ পরিবর্তনে জাতিসংঘ যেন সহযোগিতা করতে পারে।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, মানবাধিকার নিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য রয়েছে। কেউ এটিকে পশ্চিমা তত্ত্ব হিসেবে দেখে, আবার কেউ এটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে, আবার কেউ এটিকে চাপিয়ে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতেও দেখে। মানবাধিকার বিশ্বের একটি পক্ষের কোনো বিষয় নয়, এটি বৈশ্বিক। আর এ জন্য সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ৭৫ বছর আগে গৃহীত হয়েছিল।

ভলকার তুর্ক  বলেন, ব্রাসেলসে তাঁদের আঞ্চলিক দপ্তর রয়েছে। প্রায় ১০০টি দেশে কার্যক্রম রয়েছে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে বিশ্বের সব দেশে কার্যালয় খোলা যায়নি। এ কারণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। বাংলাদেশ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এ পরিবর্তন সহজ নয়। এখন যেখান থেকেই সম্ভব বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।##

নিউজ-রাজগৌরী-অক্টোবর ২৪/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর