বিশেষ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালী ও গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি অংশে নির্মিতব্য দেশের সর্ববৃহৎ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলমান করোনা সংকট আর টাওয়ার দিয়ে ওভারহেড তার টানানোর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কিছু সমস্যা সমাধান হলেই আগামী তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে যেতে পারবে।
তবে তিন মাসের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যদি টাওয়ারে তার টানানোর ঝামেলা মিটে যায়, তাহলে আরো আগেই প্রকল্পটি চালু হতে পারে। এটি দেশের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারের পরিকল্পনার আওতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুতিয়াখালীতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে (প্রশাসনিকভাবে প্রকল্প স্থানটি গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নে)। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ প্রতিষ্ঠান এইচডিএফসি সিনপাওয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের তদারকিতে শুরু থেকে আছে বাংলাদেশ সরকার। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে এ প্রকল্পের মাধ্যমে আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
বর্তমানে প্রকল্পের অবকাঠামো এবং কারিগরি নির্মাণকাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে টাওয়ারগুলোতে তার টানানো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, যদি করোনা সংকট না থাকত তাহলে দেশবাসী এত দিনে হয়তো প্রকল্পটির সুফল পেতে শুরু করত।
প্রকল্প স্থান থেকে জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এই ট্রান্সমিশন লাইনের এক কিলোমিটার যাবে টাওয়ারের মাধ্যমে। বাকি চার কিলোমিটার যাবে মাটির নিচ দিয়ে। এত দিনে মাটির নিচের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু টাওয়ার দিয়ে তার টানানো নিয়ে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকদের সঙ্গে কিছু টানা পড়েন সৃষ্টি হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। যে জন্য তার টানানোর পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। এটা এখনো একটা উল্লেখযোগ্য অসমাপ্ত কাজ।
প্রকল্পটির কারণে সুতিয়াখালীর ওই এলাকায় আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এখানে স্থানীয় লোকজন কাজের সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর স্থানীয় কয়েক শ শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্প ঘিরে এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে বলে স্থানীয়দের আশা। ময়মনসিংহ শহরতলির এ এলাকাটি ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত হবে বলেও অনেকের ধারণা।
এইচডিএফসি সিন-পাওয়ারের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ মো. শফিকুল ইসলাম, পিএসসি (অব.) সম্প্রতি এক মতবিনিমিসভায় বলেছেন, সরকারের সব নিয়ম-নীতি মেনে এ কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ বাস্তবায়নের পথে চলমান প্রকল্পগুলোর মাঝে এটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিত দেবনাথ বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারি তদারকিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সৌরবিদ্যুৎ পরিবেশের জন্য উপযোগী যাকে গ্রিন এনার্জিও বলা হয়ে থাকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহের গ্রাহকরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে।