বিদ্যালয়ের টাকা আত্মাসাৎ করে গৌরীপুর থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে গেলেন প্রধান শিক্ষক

juel / ২২১ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
নামের মিল থাকায় বিদ্যালয়ের টাকা আত্মাসাৎ করে বদলি হয়ে চলে গেলেন প্রধান শিক্ষক
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় ভিন্ন বিদ্যালয়ের টাকা নিজ বিদ্যালয়ের একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে আত্মাসাত করে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম দিলরুবা ইয়াসমিন। সে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ৪৫নং পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ওই শিক্ষকের সার্ভিস বুক হারানো নেপথ্য অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে শুভংকরের ফাঁকির এক রহস্য।

এসব তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন। তিনি বলেন, টাকা ফেরতের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে এবং মৌখিক তাগিদা দেয়া হলেও টাকা ফেরত দেননি ওই প্রধান শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের গোপন তদন্ত ও পত্রাদেশ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ৪৫নং পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন ২০১৯সালের ১১অক্টোবর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় ২০১৮-১৯অর্থবছরে রামগোপালপুর ইউনিয়নের ১৩৯নং পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেন্স খাতের ৪০হাজার টাকা ভুলক্রমে ৪৫নং পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাউন্টে চলে যায়। বিধিবহিভূতভাবে প্রধান শিক্ষক এ টাকা উত্তোলনও করেন।

এরপর বদলি হন ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০২০সালের ১৪ জানুয়ারি বদলি হন ঢাকা মিরপুরের তাফালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভুলক্রমে চলে যাওয়া টাকা ফেরতের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাধিকবার মৌখিক তাগিদা দেন। এতেও টাকা ফেরত না দেয়ায় ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য গত ৫ আগস্ট পত্রাদেশ জারি করেন। এই পত্রাদেশেও টাকা ফেরত দেয়নি ওই প্রধান শিক্ষক। এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, আমি আমার বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত রুটিন মেইনটেন্স খাতের ৪০হাজার টাকা উত্তোলন করে যথাসময়ে কাজও সম্পন্ন করেছি। অন্য বিদ্যালয়ের কোন টাকা এ একাউন্টে আসেও নাই, উত্তোলনও করি নাই।

অপরদিকে ওই শিক্ষকের ‘সার্ভিস বুক হারানো’ গল্পে বেড়িয়ে এসেছে শুভংকরের ফাঁকির এক গোপনরহস্য। ২০১৩ সালের ২০জুন তিনি প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ২০১৭সালের ৯জুলাই গৌরীপুর থানায় সার্ভিস বুক হারানো সংক্রান্ত জিডি করেন। জিডি নং ৩০২। ২০১৮সালের ৩১জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আদেশে তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান ওই বছরের ৩০জুন নতুন সার্ভিস বুক খোলে দেন। সার্ভিস বুক হারানো গল্পে বেড়িয়ে আসে শুভংকরের ফাঁকির গোপন রহস্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সার্ভিস বুকে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন ২০১৩সালের ২৯ডিসেম্বর থেকে ২০১৪সালের ৮ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪২দিনের চিকিৎসা ছুটি, ২০১৫সালের ১-১০জানুয়ারি পর্যন্ত বিনাবেতন ছুটি, একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪মে পর্যন্ত ৭২দিন ছুটি, ১১আগস্ট থেকে ১৯সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০দিনের ছুটি ভোগ করেন। নতুন খোলা সার্ভিস বুকে এসকল ছুটি বাদ দেয়া হয়েছে। ফাঁকি দেয়া হয়েছে বিশাল এ ছুটির বহর। শুধু এক বছরের ৩৬৫দিনের মধ্যে সরকারি ও অফিসিয়াল ছুটি ব্যতিত ১২২দিন ছুটি ভোগ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, আমার সার্ভিস বুক অফিস থেকে হারিয়েছে, আমি ডিজি করেছি, অফিসের লোকজন সার্ভিস বুক লিখেছে, সুতরাং এ দায়ও শিক্ষা অফিসের।

এদিকে সার্ভিস বুক হারানো সংক্রান্ত এমন শিক্ষকের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৮সালে প্রায় ৩শ জন শিক্ষকের সার্ভিস বুক ছিলো না। অধিকাংশ শিক্ষকদের ফাাঁকিবাজি গায়েব করতেই নিখোঁজ হয়ে যায় এ সার্ভিস বুক। ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকরাও ভোগান্তির শিকার হন এ দপ্তরে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০জনের নতুন সার্ভিস বুক খোলা হয়েছে, অন্যগুলোও প্রক্রিয়াধীন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর