ইকবাল হোসেন জুয়েল;
দেশের রাইস মিল গুলোতে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে উৎপন্ন চালের কুঁড়া থেকে পরিশোধিত হয়ে উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতে পরিনত হচ্ছে। গত দুই অর্থবছরে শুধুমাত্র ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাইস ব্র্যান অয়েল ভারতে রফতানি হয়েছে।আমেরিকার হার্ট ফাউন্ডেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে রাইস ব্র্যান অয়েল সিরাম কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রাইস ব্র্যান অয়েলে বিদ্যমান উপকারী উপাদান রক্তে কোলেস্টেরলের শোষণ কমায় এবং দেহ থেকে তা বের করে দিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে রক্তের টিজির পরিমাণ কমায়। পাশাপাশি এইচডিএল কোলেস্টেরল/গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা হার্টের আর্টারিতে ব্লক জমতে দেয় না। ফলে হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপসহ আরো অনেক মারাত্মক সমস্যা কমায়।যে রাইস ব্র্যান ওয়েলের ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারনে দেশটিতে বাংলাদেশী ব্র্যান রাইস অয়েলের রফতানি দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোমরা শুল্কস্টেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, গত দুই অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩১০ টন বাংলাদেশী রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়েছে ভারতে। এর মূল্য ২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ টাকা।
সূত্রটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৩ হাজার ৮৪৭ টন রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়, যার মূল্য ৫৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৯ হাজার ৭৪১ টন, আগস্টে ৭ হাজার ৯৮৯ টন, সেপ্টেম্বরে ১১ হাজার ৯৯১ টন, অক্টোবরে ৭ হাজার ৬৬৮ টন, নভেম্বরে ৯ হাজার ৩৪৫ টন, ডিসেম্বরে ১১ হাজার ১৯৫ টন, জানুয়ারিতে ১০ হাজার ৭৫২ টন, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৬৫ টন, মার্চে ২ হাজার ৯০০ টন এবং জুনে ২০০ টন। তবে এপ্রিল-মে মাসে করোনার জন্য বন্দর বন্ধ থাকায় পণ্যটি রফতানি হয়নি।
আর ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভোমরা বন্দর দিয়ে রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়েছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৬৪ টন, যার মূল্য ১ হাজার ৯০০ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী, গেল দুই বছরে ২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ টাকার রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়েছে।
ভোমরা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার জানান, তার প্রতিষ্ঠান বছরে ৮-১০ হাজার টন রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি করে। তবে করোনা সংকটের কারণে বর্তমান পণ্যটির রফতানি কিছুটা কমে গেছে।
ভোমরা বন্দরের আরেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুন্দরবন এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দীপংকর কুমার জানান, তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি হয়ে থাকে। ভারতে পণ্যটির ভালো চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যটি রফতানি করে।
ভোমরা স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, বাংলাদেশী যেসব পণ্য ভারতে রফতানি হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাইস ব্র্যান অয়েল। দেশটির বাজারে বাংলাদেশী রাইস ব্র্যান অয়েলের চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যটি ভোমরা বন্দর দিয়ে রফতানি করে থাকে।
ভোমরা শুল্কস্টেশনের দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার মালেকিন নাসির আকন্দ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য ভারতে রফতানি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাইস ব্র্যান অয়েল। তাছাড়া এ বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস বর্জ্য, নারকেলের শলা, প্রাণের কয়েকটি পণ্যসহ বেশকিছু বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়।