গৌরীপুরে আবারো নিষিদ্ধ পিরানহার আগ্রাসন

juel / ১২৯ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০


ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মানুষ খেকো আফ্রিকান আমাজান নদীর মাছ পিরানহা চাষ ও বিক্রি সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ হলেও ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সকল হাট-বাজারসহ রাস্তার পাশে বিচ্ছিন্ন ভাবে অবস্থান নেয়া ভাসমান মাছ বিক্রেতাকেও প্রকাশ্যে উক্ত মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে৷
আজ(সোমবার) বিকালে গৌরীপুর -শাহগঞ্জ সড়কের মিরিকপুর মোড়ে জনৈক মাছ বিক্রেতাকে অনান্য মাছের সাথে বিক্রি নিষিদ্ধ পিরনহা মাছও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া গৌরীপুর মাছ মহালসহ উপজেলার সকল হাট বাজার গুলোতে কোন প্রকার রাখঢাক না রেখেই বিক্রি হচ্চে নিষিদ্ধ পিরানহা।
মূলত রাক্ষসী মাছ হিসেবে পরিচিত পিরানহা যে জলাশয়ে চাষ হয় সেখানে সকল প্রজাতির মাছ খেয়ে ফেলে মাছের বংশ ধ্বংস করে দেয়৷ এ মাছের চর্বি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করার পাশাপশি এ মাছে থাকা ফসফেট মানুষের মূত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এমাছ নববিবাহিত নারীর বন্ধ্যত্ব সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলেও চিহ্নিত করেছে বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও রক্ত বের করে দেয়াসহ মানুষের দেহে নানান রোগের সৃষ্টি করে। যে কারনে সরকার ২০০৮ সনে আইন করে সকল ক্ষেত্রে পিরানহা মাছ চাষ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে। সেসময় সুনিদৃষ্ট কোন নিতিমালা না থাকার সুযোগে গৌরীপুরের প্রায় ১০টি মৎস্য হ্যাচারী এ মাছের রেনু উৎপাদন করে গোপনে সারাদেশে সরবরাহ করে আসছিল।রামগোপাল পুুরের শিবপুরের ৫০টির অধিকসহ উপজেলার ২ শতাধিক পুকুরে সে সময় প্রকাশ্যেই চাষাবাদ হত উক্ত মাছের৷ ২০১৩ সনে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যাপক তৎপরতা ও প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারনে তখন উপজেলার রাজ মৎস খামার,বন্ধন মৎস প্রজনন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি মৎস্য প্রজনন প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ লক্ষাধিক পিরানহা মাছের পোনা বিষ প্রয়োগে ধ্বংস করেতে বাধ্য হয়। ফলে পিরানহা চাষের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গৌরীপুর থেকে নিষিদ্ধ পিরানহা উৎপাদন ও বিক্রি প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গৌরীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভাসমান মাছ বিক্রেতার কাছেও বিক্রি নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ বিক্রি নিষিদ্ধ এ মাছের বিপুল প্রবাহ দেখে পূর্বের ন্যায় গৌরীপুরের বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ে আবারও পিরানহার চাষ হচ্ছে বলে সন্দেহ তাদের। মিরিকপুর মোড়ের উক্ত পিরানহা বিক্রেতা জানান ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের উক্ত মাছগুলো তিনি শাহগঞ্জ বাজারের নিকটবর্তী গাগলা মোড়ে অবস্থিত মাছের আড়ত থেকে আজ সকালে কিনে এনেছেন। গাগলা মোড়সহ ময়মনসিংহ – কিশোরগঞ্জ মহা সড়কের ডৌহাখলার গাজীপুরে অবস্থিত মাছের আড়ত গুলোতেও প্রতিদিন শত শত পিরানহা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান৷ গাগলা মোড়ের মাছের আড়তে সাধারনত বোকাইনগর, অচিন্তপুর,মাওহা,সহনাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পুকুরের মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। অপরদিকে গাজীপুর মাছের আড়তে উপজেলার রামগোপালপুর, ডৌহাখলা,ভাংনামারি ইউনিয়নসহ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ এলাকার পুকুরের মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় । যে কারনে স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেয়া যায় নিষিদ্ধ পিরানহা উক্ত এলাকার বিভিন্ন পুকুরে উৎপাদিত হচ্চে। সাম্প্রতিক সময়ে অধিক বৃষ্টিতে উপজেলার নিন্ম এলাকায় অবস্থিত অনেক পুকুর পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে৷ এমন অবস্থায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া পুকুরের কোনটায় পিরানহা চাষ হয়ে থাকলে নিষিদ্ধ এমাছ খাল-বিল-হাওড়সহ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়বে। এতে করে পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি পানির মাছ পিরানহার আগ্রাসনে অস্থিত্ব হারানোর সম্ভাবনা প্রবল বলে জানান এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবিরা। যে কারনে নিষিদ্ধ পিরানহা চাষ ও বিক্রি বন্ধে পুনরায় ২০১৩ সনের মত প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ বলেন পিরানহা মাছ উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে৷


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর