আনোয়ার হোসেন শাহীন;
গৌরীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ওস্তাদ সুবোধ সরকারকে নিয়ে কথা হয়েছিল তা ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংগীত বিষয়ক ম্যাগাজিন ” সংগীত” তে ১৬তম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যায় ৪ টা মার্চ ১৯ ৯৫ সনে ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। এই গুণী মানুষটি১৮ ই নভেম্বর ২০০৫ ইং সালে পরলোকে গমন করেন। সে দিনের গৌরীপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে কথাগুলো
ওস্তাদ সুবোধ সরকারের ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে আবারও উপস্থাপন করা হলো।
ব্রক্ষপুত্রের ঐতিহ্য লালিত ময়মনসিংহ জেলার উল্লেখযোগ্য একটি নাম গৌরীপুর। পূর্বে যা রাজগৌরীপুর হিসাবে পরিচিত ছিল। বারো জমিদারের বাসছিল এই গৌরীপুরে। প্রচীন জমিদারে ঐশ্বয্য বিলাসী নানা স্থাপত্য কীতির নিদর্শন রয়েছে এই থানায়। এই জমিদার বাড়িগুলোতে অনেক সংগীত সাধক ছিলেন সমাদৃত। গুণী শিল্পীদের সুরের ঝংকারে মুখরিত করে তুলতো রাজ দরবার বিশেষ করে জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, ও হরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী রাজ দরবার ছিল উল্লেখযোগ্য। বলতে গেলে এক সময় সংগীতের পীঠস্থান ছিল এই গৌরীপুর। তাই সংগীতের ইতিহাসে গৌরীপুর বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ওস্তাদ এনায়েৎ খাঁর ছেলে বিলায়েৎ খাঁর জন্মস্থান ছিল এই গৌরীপুরে। পরবর্তী সময়ে যাদের সুরের ঝংকারে সংগীতের স্বাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিত ওস্তাদ বিপন দাস,ওস্তাদ মাধব সরকার। আজ আর সেই গুনী শিল্পীরা নেই সুতরাং তাদেরি ঘরোয়ানায় অতি কষ্টে সংগীত শিল্পের বিকাশ ও শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে মানুষটির অবদান প্রায় পিতৃতুল্য গৌরীপুরের সংগীতের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন সংগীত সাধক ওস্তাদ সুবোধ সরকার। গৌরীপুর সিনেমা হল সড়কের পাশেরই রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি পুকুরওয়ালা বাড়ি। পুকুর পাড়ের রাস্তা দিয়ে আসলেই শুনতে পাবেন সেতারের ঝংকার, তবলার গমক, স্বরগম ভাজার আওয়াজ। বাড়ির সম্মুখে রাস্তার পাশেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রয়াত ওস্তাদ বিপিন মাধব স্মৃতি পরিষদ। শিল্পী সুবোধ সরকার ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট্টবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছিল। জন্মসূত্রে পাওয়া তাদের এই সংগীত।পিতা গনেশ সরকার ছিলেন গৌরীপুর রাজদরবারের একজন গুণী এস্ত্রাজ বাদক।গোটা পরিবার সবাই সংগীতের পুজারী।
পিতার হাতেই সংগীতের হাতেখড়ি। ওস্তাদ বিপিন দাস ও মাধব সরকারের কাছে ও সংগীতের তালিম নিয়েছেন। সে একজন প্রতিশ্রুতিশীল সংগীত শিল্পী।সংগীতের শিক্ষক হিসাবে তিনি যতেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি একজন গীতিকার ও সুরকার।’ সংগীতের প্রয়োজন ও বর্তমান’ নামে একটি বই লিখতে যাচ্ছেন। সুবোধ সরকার ঢাকা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে শুদ্ধ সংগীত প্রসার গোষ্ঠীর সৌজন্যে একক সেতার বাদন অনুষ্ঠানে করে প্রসংসিত হয়েছেন।
সুবোধ সরকার ওস্তাদ বিপিন মাধব স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা,সেই সঙ্গে গৌরীপুর শিল্পী গোষ্ঠী, কঁচি কাঁচার মেলা, জ্ঞানগৃহ,শ্যামগঞ্জ শিশু নিকেতন,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট,বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদের প্রভৃতি প্রতিষ্টানের সাথে জড়িত।সুবোধ সরকার বলেন,কখনো কখনো হতাশা ও ব্যাথা অনুভব করি, যখন বুঝি পারি এই সংগীত মাধ্যমটাকে কেউ অবহেলার চোখে দেখে বা এই পেশার সাথে জড়িত শিল্পীটিকে অবমূল্যায়ন করছে তখন।গৌরীপুর শিল্পকলা একাডেমি প্রসঙ্গে বলেন এটা এখন নাম সর্বস্ব হয়ে গেছে। এরা প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না। ওস্তাদ সুবোধ সরকার সংগীতের মাঝেই বেঁচে থাকতে চান।আমরা শিল্পীর প্রতিভা বিকাশের সঠিক মুল্যায়ন ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।