গৌরীপুরে মেয়র পদে লড়ছেন নিহত শুভ্রর স্ত্রী তাহরিমা

juel / ২২৩ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের স্ত্রী তাহরিমা আক্তার গৌরীপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গৌরীপুর পৌরসভায় তিনিই প্রথম নারী মেয়র প্রার্থী। এর আগে কোনো নারী প্রার্থীর গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নজির ছিল না। রোববার পৌরসভার প্রার্থী যাচাইবাছাই বোর্ডে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়।

গৌরীপুর পৌর নির্বাচনে তাহরিমাসহ মোট ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাহরিমা ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত শফিকুল ইসলাম, বিএনপি মনোনীত আতাউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’) বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, ন্যাপ (মোজাফফর) মনোনীত আবু সাঈদ মো. ফারুকুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’) কাউন্সিলর আবদুল কাদির ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’) পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু কাউসার চৌধুরী। কম-বেশি সবাই আলোচনায় আছেন এবং সবারই এলাকাভিত্তিক ভোটব্যাংক রয়েছে।

গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন মাসুদুর রহমান। গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাতে মধ্যবাজার পানমহাল এলাকায় দুষ্কৃতকারীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাসুদুরকে হত্যা করে। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুদুর পৌর শহরের মধ্যবাজারে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের কালীপুরে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত দুটি অটোরিকশায় করে এসে মাসুদুরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন। হত্যাকাণ্ডের পরদিন পুলিশ রিয়াদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে।

মাসুদুর গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রিয়াদুজ্জামান এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিলেও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের ইন্ধনে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন মাসুদুরের সমর্থকেরা রিয়াদুজ্জামান ও মেয়র রফিকুলের বাড়িতে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর স্বপ্ন পূরণে এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। শিগগিরই জনসংযোগ শুরু করব। বিজয়ী হলে গৌরীপুর পৌরসভাকে দেশের সেরা মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত করার ইচ্ছা রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে আসামি করে মামলা হয়। মামলায় তিনি ছাড়াও বিএনপির নেতা রিয়াদুজ্জামানসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ মেয়র রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন।
মাসুদুর রহমান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত তিনজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রধান আসামি রিয়াদুজ্জামানকে ইউপি সদস্য পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তাহরিমা আক্তার গত ৩১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. আবদুর রহিমের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। স্বামী মাসুদুরের কবর জিয়ারত শেষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহরাব আরেফিন, গৌরীপুর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং মাসুদুরের ছোট ভাই আবিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমা ও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে তাহরিমা আক্তার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর (মাসুদুরের) স্বপ্ন পূরণে এই নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। শিগগিরই জনসংযোগ শুরু করবেন। বিজয়ী হলে গৌরীপুর পৌরসভাকে দেশের সেরা মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত করা ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গৌরীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছেন ২১ হাজার ২১২ জন। এদের মধ্যে নারী ১০ হাজার ৮৪৬ জন এবং পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩৬৬ জন। ৩০ জানুয়ারি ১ম শ্রেণির এই পৌরসভায় ৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে ৭ জন ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ৪৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইকবাল হোসেন জুয়েল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর