নেত্রকোনা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি,ভেসে গেছে ১১ কোটি টাকার মাছ

Iqbal Hossain Jwel / ৯১ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ

রোববার রাত থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে নেত্রকোনায়। জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ডুবে গেছে ফসলের মাঠ, পুকুর। বন্যায় ১১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

সোমবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকায় লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খালিয়াজুরীর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ১১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

ধনু ও উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার দুর্গাপুরে বুধবার সকালে ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

গত এক সপ্তাহ আগে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে প্রায় সাতটি উপজেলাতে দ্বিতীয়বার বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তখন অন্তত ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ ঠাঁই নেয়। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কলমাকান্দা উপজেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জুনের শেষ দিকে অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা উপজেলার আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এর দুই সপ্তাহ ব্যবধানে আবার বন্যা হয়। তখন প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় প্রায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়।

বন্যার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি বাঁধ, উঁচু স্থানসহ সড়কে আশ্রয় নেয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। টানা পাঁচদিন ধরে কলমাকান্দার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। ওই সময়ের বন্যায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি আসে। এ ছাড়া প্রায় তিনশ’ একর আমন বীজতলা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি খেত নষ্ট হয়। মৎস্য সম্পদেরও বিরাট ক্ষতি হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কবীর জানিয়েছিলেন, অন্তত ৩ হাজার ৩৬২ জন খামারীর ৩ হাজার ৬৭৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। এতে ৯৩৯ দশমিক ৭৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৯২ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন পোনার ক্ষতি হয়েছে। মাছ, পোনা ও অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ সব মিলিয়ে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৯১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

গত মঙ্গলবার থেকে বন্যার পানি কমে তিনদিন পর গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। কিন্তু গত রোববার রাত থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালি, ধুনুসহ প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বুধবার বিকালে জানান, জেলার সব কটি প্রধান নদ-নদীর পানিই একটু একটু করে বাড়ছে। তবে ধনু ও উব্দখালি ছাড়া অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৮২ মিটার। দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৬ মিটার। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৬ মিটার। সেখানে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে ১২ দশমিক ১০ মিটার। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৫ মিটার। আর খালিয়াজুরীর ধনু নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১২ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৭ দশমিক ৭১ মিটার দিয়ে।

আক্তারুজ্জামান জানান, বুধবার মোহনগঞ্জে ২৭ দশমিক ৪ মিলি মিটার, সদর উপজেলায় ১৭.০০ মিলিমিটার, জারিয়ায় ৩০ মিলি মিটার ও দুর্গাপুরে ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, খালিয়াজুরীতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রে ১১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে আবারও কিছু পানি বাড়ছে। তবে বৃষ্টি না হলে হয়তো পানি কমে যেতে পারে।’

তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় এ পর্যন্ত ১৬৫ মেট্রিক টন চাল, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, জেলায় ৪০০ মেট্রিক টন জিআর, নগদ ৮ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ২ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য টাকা ২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর