ইকবাল হোসেন জুয়েল;
গৌরীপুর উপজেলায় একসময় একমাত্র শহীদ মিনার ছিল হারুন পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনারটি। উপজেলা সদরে অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলো উক্ত শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। উপজেলা সদরের বাইরে সেসময় আর কোন শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে সেসময় বাধ্য হয়ে সাময়িকভাবে কলাগাছ, কাগজ ও বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন।
২০১২ সনে তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকির ১ বৎসরের মধ্যেই গৌরীপুর উপজেলার প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার,বাসষ্ট্যান্ড প্রভৃতি স্থানে আড়াই শতাধিক শহীদ মিনার স্থাপনের মাধ্যমে অনন্য নজির স্থাপন করেন। তার দেখানো পথ ধরে গৌরীপুর আজ শহীদ মিনারের জনপদে পরিনত হয়েছে।
সে বছর শহীদ দিবসে প্রথম বারের মত শহীদ মিনার গুলোতে অর্পণ করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকারের অধীন সকল ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় প্রশাসন, নিজস্ব তহবিল থেকে বাকী প্রায় সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক,কলেজ,কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্টান ও মাদরাসায় স্থাপন করা হয় আরও দেড় শতাধিক শহীদ মিনার।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অমর একুশেসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করার লক্ষে প্রয়াত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুজিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৌরীপুরে শহীদ মিনার নির্মানের যে উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন তা আজ জাতীয় ভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিভিন্ন গন মাধ্যমে সেসময় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ,শুধুমাত্র ২০১২ সনে গৌরীপুর উপজেলাতে ২২৫ টি শহীদ মিনার একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, গৌরীপুর থেকে টানা ৩ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই উপজেলার যেসব স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে শহীদ মিনার স্থাপন করা হতো,সেসব স্থানে টিআর কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দের আওতায় শহীদ মিনার স্থাপনের নির্দেশ দেন। সে এ সময় উদ্যোগ নেয়ায় দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,শ্যামগঞ্জ হাফেজিয়া মাদরাসা, শ্যামগঞ্জ,গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর হাজী আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, গজন্দর, অচিন্তপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জ বাজার,সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ,মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,নহাটা উচ্চ বিদ্যালয়,লংকাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়,সহনাটী ইউনিয়নের ভালকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়,পাছার উচ্চ বিদ্যালয়, বোকাইনগর ইউনিয়নের নাহড়া বাজার, কেল্লাবোকাইনগর ফাযিল মাদরাসা,বেতান্দর উচ্চ বিদ্যালয়,বাংলাবাজার,বাসাবাড়ী বাজার,রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর বাস¯ট্যান্ড,পিজেকে উচ্চ বিদ্যালয়,রামগোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়, কলতাপাড়া বাজার, ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী উচ্চ বিদ্যালয়,সিধলা ইউনিয়নের বালিজুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৫টি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। টিআর প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন স্থানে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়৷
গৌরীপুর অগ্রদূত নিকেতনের প্রধান শিক্ষক ম.নূরুল ইসলাম জানান, মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে আত্মাত্যগকারী শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে নতুন প্রজন্ম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে মজিব বর্ষে প্রয়াত ক্যাপ্টেন মুজিবের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ মিনার গুলোতে শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার জন্য প্রস্তত রয়েছে।
মাধ্যমিক ও প্রথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায় ২০১৬ সনে ক্যাপ্টেন মুজিবের মৃত্যুর পর তার দেখানো পথ ধরে সকল প্রথামিক, মাধ্যমিক ও কলেজ সমূহে পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করে আসছে। যার সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক । আরও প্রায় ৩০ টির মত প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যা নির্মাণ সম্পন্ন হলে উপজেলায় শতভাগ শহীদ মিনার স্থাপন হবে।
যার দেখানো পথে গৌরীপুর উপজেলা আজ শহীদ মিনারের জনপদে পরিনত হয়েছে সেই ক্যাপ্টেন মুজিব আজ বেঁচে নেই,কিন্তু তার কতৃক নির্মিত অনন্য স্হাপনা শহীদ মিনারসহ বঙ্গবন্ধু চত্বর, বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ প্রতিকৃতি। যে সৃষ্টি গুলোর মাধ্যমে গৌরীপুরের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে স্মরনে রাখবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।