গৌরীপুরের ভাষাবীরদের আজও স্বীকৃতি মিলেনি

Iqbal Hossain Jewel / ১৬৫ দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আনোয়ার হোসেন শাহীনঃ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ভাষাবীরদের আজও স্বীকৃতি মিলেনি,পাননি একুশে পদক, নির্মান করা হয়নি কোন স্মৃতি ফলক।
তৎকালীন পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন সরকার ১৯ জন নেতার নামে হুলিয়া জারি করে ছিল। হুলিয়া জারীকৃত ভাষা সৈনিকের মধ্যে আজ কেউ জীবিত নন।
তারা হলেন- গৌরীপুরের কৃষক প্রজা পার্টর নেতা আব্দুল ওয়াহেদ বোকাইনগরী এম এল এ,আব্দুল কদ্দুস বোকাইনগরী, আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি খালেদুজ্জামান, হাতেম আলী মিয়া (পরবর্তিতে এমসিএ) ,আব্দুস সামাদ,হায়দার আলী,আমির উদ্দিন,ছফির উদ্দিন , শ্যামগঞ্জের মোজাহের উদ্দিন,বিড়ি শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক উদ্দিন ফকির, কমিউনিস্ট নেতা মোঃ আবুল হোসেন ,ঈশ্বরগঞ্জের মোসলেম উদ্দিন খান,সদর মহকুমার আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ মন্ডল,আঠার বাড়ীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান,ছাত্রলীগ নেতা ডাঃ এম এ সোবহান,মোঃ জমশেদ আলী, জাতীয় কংগ্রেসের দপ্তর সম্পাদক আশুতোষ রায়, এডভোকেট জমশেদ আলী ।

১৯ ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সুচনালগ্ন থেকেই এ অঞ্চলে তৎকালীন ইশ্বরগঞ্জ থানার অধীনে গৌরীপুর ছিল আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে ভাষার দাবীতে
নেতৃবৃন্দ হুলিয়া মাথায় নিয়ে টিনের চোঙ্গা ফুঁকিয়ে মিটিং, মিছিল প্রথসভা,সমাবেশ, হাতের লেখা পোস্টার,লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে। আন্দোলনে স্বপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষে গ্রামের হাট- বাজারে যেতে ভাষাসৈনিকরা কখনো পায়ে হেঁটে বা গরুরগাড়ী দিয়ে অতিকষ্টে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়েছেন।২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ছাত্র – জনতার মিছিলের উপর পুলিশের গুলি চালানোর বর্বরতার খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পরার পর বিকেলে গৌরীপুরের ছাত্র-জনতা এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।২৩ ফেব্রুয়ারী গৌরীপুরে ধর্মঘটের ডাক দিলে স্থানীয় আর কে হাই স্কুলের ছাত্ররা গৌরীপুর- ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করে রাখে।খবর পেয়ে ময়মনসিংহের দাঙ্গা পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্র- জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে রেলপথ মুক্ত করে।এরপর ফেব্রুয়ারী ২৮-২৯ তারিখে গৌরীপুরের তৎকালীন বাজার ময়দানে (শহীদ হারুণ পার্ক) এর একপ্রান্তে ইট দিয়ে এবং লাল সালু কাপড় মুড়িয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং এই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু পরক্ষণেই পুলিশ ছুটে এসে তা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এমনি ভাবে দুইদিন একই ঘটনা ঘটায় পুলিশ বাহিনী।এ সময় গৌরীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা হাতেম আলী মিয়া, খালেদুজ্জামান,আব্দুল কদ্দুছ বোকাইনগরীকে পুলিশ গ্রফতার করে নিয়ে যায়।প্রায় নয় মাস কারাভোগের পর তাদের মুক্তি দেয়া হয়। ভাষার দাবীতে এ অঞ্চলে যারা নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন তাদের দাবী ছিল ভাষা আন্দোলনকে জাগরুক করে রাখার জন্য নেতৃত্বদানকারী ভাষাসৈনিকদের নামে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ম. নূরুল ইসলাম ও সাহিত্যিক আজম জহিরুল ইসলাম বলেন-
এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তা বর্তমান প্রজন্ম এ ইতিহাসটুকু জানার লক্ষে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি আদায়সহ স্মৃতি ফলক নির্মানে যৌক্তিকতা রয়েছে। তা না হলে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।ভাষা শহীদদের সন্মাননার জন্য একুশে পদক দেয়া হচ্ছে, গৌরীপুরে ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণ কারীদের ও একুশে পদক দেয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য খবর