বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আজ ২রা মে ২০২১ (রবিবার)সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী,গৌরীপুর থেকে পরপর ৩ বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী।
প্রয়াত ক্যাপ্টেন মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কলতাপাড়াস্থ মরহুমের কবরস্থানে পুষ্পমাল্য অর্পণ,ফাতেহা পাঠ,স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার বাদ আছর কলতাপাড়ায় মরহুম স্মরনে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গৌরীপুর থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠানসহ জেলা,উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া গৌরীপুর উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে মরহুমের স্মরনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রয়াত ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকির ১৯৪৭ সালের ১ জানুয়ারী ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়ায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম মোজাফফর আলী ফকির। তিনি একাধারে প্রায় দুই যুগ ধরে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবের বলিষ্ট নেতৃত্বে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ একটি শক্তিশালী সংগঠনে রূপ নিয়েছিল। ২০০১ ইং সনে তিনি ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ তথা গৌরীপুর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি একাধারে আরো দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ ইং সনে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
১৯৭১ সনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিব ১৯৮১ ইং সনে সেনাবহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করে নিজেকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত করেন। এসময় ময়মনসিংহ শহরে আকুয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন নিজ সহধর্মিনীর নামে নাসিমা নার্সিং হোম নামে একটি ক্লিনিক।
ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিব কলতাপাড়ায় স্থাপন করেন ৫১ ফুট উচ্চতার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য্য। এর পাশেই স্থাপন করেন উন্নয়নের মাতা শেখ হাসিনা ফটো গ্যালারী। মা ও শ্বাশুরী বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় তিনি মারা যান। বর্তমানে এ বৃদ্ধাশ্রমের দ্বিতল ঘরটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রায় ১ হাজার গজ দুরত্বে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন নিজ পিতার নামে মোজাফফর আলী ফকির স্কুল ও কলেজ।
এছাড়া ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিব গৌরীপুর পৌর শহরে স্থাপন করে গেছেন বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য্য। স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য এর সংলগ্ন নির্মাণ করেন বঙ্গবন্ধু চত্বর। বর্তমানে এ বঙ্গবন্ধু চত্বরে স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধু চত্বরে স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ট, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী রাজনীতিতে অতীতে অবদান রাখা মরহুম নেতৃবৃন্দের ভাস্কর্য্য। আজ তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই, রয়েছে তার স্মৃতি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত স্থাপনাগুলো দেখার জন্য দেশী বিদেশী পর্যটকরা আসেন গৌরীপুরে এবং ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবের কথা স্মরন করেন।
ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচররা জানান তার মৃত্যুতে গৌরীপুরে আওয়ামী রাজনীতিতে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে দলের চেইন অব কমান্ড। ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিব ছিলেন খুবই বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সম্পন্ন নেতা। তিনি গৌরীপুরে দলের সিনিয়র পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সকল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ও জানতেন এবং তাদের নামও একাধারে বলতে পারতেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধনী-গরীব সকল ব্যক্তির জানাযার নামাজ ও বিয়ের অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানে তিনি অংশ গ্রহন করতেন বলে সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসতো। সমাজের বিতর্কিত ও সমালোচিত লোকদের তিনি পছন্দ করতেন না। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গদের তিনি খুব মুল্যায়ন করতেন।
গৌরীপুর প্রেসক্লাব, গৌরীপুর সংগীত নিকেতন ও উদীচীর কার্যালয় সংস্কারে তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করেন এবং স্থাপন করেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্ব পয়েন্টে নির্মাণ করেন প্রায় দেড় শতাধিক শহীদ মিনার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থানে স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু মঞ্চসহ আরো অনেক মঞ্চ।
এছাড়া এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, ব্রীজ-কালবার্টসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তিনি সম্পন্ন করে যান।
উল্লেখ্য ২০১৬ ইং সনের ২ মে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিব মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে গৌরীপুরে কলতাপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাশে সমাহিত করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে মৃত্যুর পূর্বে তিনি নিজ সমাধির স্থান ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে নির্ধারিত করে রেখে গিয়েছিলেন। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য’র পাশে আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলেন তার সমাধিস্থল।