নারীনেত্রী সুফিয়া কদ্দুছ চৌধুরী ছিলেন একজন আমৃত্যু আওয়ামী লীগার।
মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মেদেনীমন্ডল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খানবাড়ীতে ১৯৪০ ইং সালে মৌঃ মোঃ জালাল উদ্দিন খান ও পারুল বেগমের গর্ভে সুফিয়া কদ্দুছ চৌধুরীর জন্ম। ডাকনাম “আলো”। ঐতিহ্যবাহী খানবাড়ীর সদস্য আলোর চাচা ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল আমিনুল ইসলাম খান ও চাচাত ভাই উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান এবং দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। মরহুম সালাম খান, আপেল খান, মিজান খান, লিটন খান, মরহুমা গ্রীন খান ও শিরিন খানের আপন বড় বোন…….
বাংলা ১৩৬২ সনে ১৬ বছর বয়সে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও তৎকালীন ১ নং ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার মোঃ আব্দুল কদ্দুছ চৌধুরী (বাদশা চৌধুরী)’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আলো রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গৌরীপুর থানা শাখায় যোগদিয়ে অল্পদিনেই তিনি নেতৃত্বগুণের বহিঃ প্রকাশ ঘটান।
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে অংশগ্রহন করে নিজেকে গর্বিত করেছিলেন সুফিয়া কদ্দুছ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে সাবেক গৌরীপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আঃ হাই জানান, আমি তখন স্কুলের ছাত্র। মনে মনে ইচ্ছাপোষন করি জনসভায় যাবো। সুফিয়া কদ্দুছের অনুপ্রেরণায় সুযোগও পেয়ে যাই।
গৌরীপুর থেকে ৭০ এর নিবার্চনের নব-নিবার্চিত এমপিএ হাতেম আলী মিয়ার নেতৃত্বে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ এম এ সোবান, আব্দুস সামাদ, আওয়ামীলীগ নেতা ইউনুস আলী ও গৌরীপুর থেকে একমাত্র মহিলা সুফিয়া কদ্দুছ চৌধুরী প্রমূখ ট্রেন যোগে ৬ মার্চ রাতে রওনা হয়ে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষন শোনায় সৌভাগ্য হয়েছিলো।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সুফিয়া কদ্দুছ চৌধুরী গৌরীপুর পৌর শহরের নিজ বাসায় গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও খাবারসহ নানা রকম সহযোগীতা করতেন। পরবর্তিতে তিনি মহিলাদের সংগঠিত করে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ গৌরীপুর উপজেলা শাখার প্রতিষ্টাতা সভানেত্রী নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ পদে দায়িত্বে ছিলেন।
৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর দলের দুর্দিনে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের খোজ খবর নিতেন। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে থানা আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসতেন।
সুফিয়া কদ্দুস চৌধুরী রাজনীতি পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি গৌরীপুরের নারী জাগরনের পথিকৃৎ। মহিলা সংস্থা গৌরীপুর শাখার সম্পাদিকা, মাদার্স ক্লাবের প্রতিষ্টাতা সভানেত্রী দায়ীত্ব পালনসহ রেডক্রস, মহিলা সমিতি, জাতীয় মহিলা সংস্থায় সম্প্রীক্ত থেকে নারী উন্নয়ন কল্পে সমবায় সমিতি করে নিজস্ব তহবিল থেকে সহায়তা প্রদান করে নারী মুক্তি ও নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন।
সুফিয়া কদ্দুস চৌধুরী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর স্নেহধন্য, মরহুমা সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দীন, প্রয়াত রাষ্টপতি জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভানেত্রী মরহুমা আইভি রহমান, নারীনেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বেগম মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্টজন।
এই মানুষটি ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী গৌরীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব:) মজিবুর রহমান ফকির মহোদয় এর নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর সময় ৬ জুন ১৯৯৬ সনে গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
পরবর্তিতে অসুস্থ্য অবস্থায় ২০০৪ সনের ২ জানুয়ারী আআত্মীয়স্বজন, নেতা-কর্মীদের কাঁদিয়ে পরপারে যাত্রা করেন।
মরহুমা সুফিয়া কদ্দুস চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য ও গৌরীপুর সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক, আবু কাউছার চৌধুরী রন্টির দাদী।