র্দীঘদিন ধরে পারিবারিক নানান বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল সহোদর দুই ভাইয়ের মধ্যে। এ বিরোধের জের ধরে শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী গ্রামের নিজ বাড়ীতে আবারও দুই ভাইয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বড় ভাই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটন(৫১)।
পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটনকে মৃত ঘোষনা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, কৃষিবিদ লিটনের সাথে তার সহোদর ভাই মোশারফ হোসেন জুয়েলের পূর্ব বিরোধের জের ধরে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় ছোট ভাই জুয়েল বড় ভাই লিটনকে মারতে আসলে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সামিউল আলমের লিটনের সাথে থাকা গৌরীপুর উপজেলা তাতীলীগ এর সহ-সভাপতি বিপ্লব মন্ডল জানান সকাল থেকে তিনি লিটনের সফর সঙ্গী হিসেবে কলতাপাড়া এলকায় ঈদ উপহার বিতরন করছিলেন। বেলা ৩ টায় আরও উপহার সামগ্রী কেনার জন্য সামিউল আলম লিটন তাকেসহ তাতীলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদাকে সাথে নিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তারা শম্ভুগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কাছাকাছি পৌছার সময় সামিউল আলম লিটনের ফোনে তার ছোটভাই রাসেল ও বোন ফোন করে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হন। বাড়িতে পৌছার সাথে সাথে তার ছোটভাই জুয়েল তার সাথে তর্কাতর্কি শুরু করে এবং একপর্যায়ে পিস্তল বের করে গুলি করলে তা লক্ষভ্রষ্ট হয়। এ সময় ড. লিটন অসুস্থ বোধ করলে বিপ্লবসহ অন্যরা তাকে পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় নিয়ে যায়। এসময় ডা.লিটন তার প্রচন্ড বুকব্যথা করার কথা উল্লেখ করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেবার জন্য বলেন। হাসপাতালে যাবার পথে তার ছোটভাই জুয়েল পুনরায় তার গাড়ির পথরোধ করার চেষ্টা করলে ডা.লিটন প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে জুয়েলের কাছে যাবার চেষ্টা করার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। সঙ্গীরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
লিটনের কনিষ্ঠ ভাই মোজাম্মেল হক রাসেলের অভিযোগ, তাঁর মেঝো ভাই জুয়েল বড় ভাই লিটনের উপর সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হঠাৎ স্বশস্ত্র হামলা করে। এ সময় জুয়েল লিটনের বুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এর এক পর্যায়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বড় ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে জুয়েল পিস্তলের গুলি ছুড়ে। ওই গুলি লিটনের গায়ে না লাগলেও লাঠির আঘাতে লিটন ভাই বুকে ব্যাথা অনুভব করলে আমি তাকে হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। এই মৃত্যুর জন্য জুয়েল ও তার সাঙ্গপাঙ্গুরা দায়ি বলেও অভিযোগ করেন কনিষ্ঠ ভাই মোজাম্মেল হক রাসেল।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, দুই ভাইয়ের ঝগড়ার এক পর্যায়ে লিটন অসুস্থ হয়ে পড়লে এই ঘটনা ঘটে। অনেক দিন ধরেই তাদের দুই ভায়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তিনি আরও জানান, লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে, তখন এই মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তর্কবির্তকের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় অন্য কিছু বিষয় জানা যায়নি। তবে ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান ওসি।কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটন ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী গ্রামের মরহুম ডা: সুলাইমান এর বড় ছেলে। তিনি কৃষি ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি ছিলেন। গত এক যুগ ধরে তিনি ব্যবসার পাশাপাশি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন।