গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শাহগঞ্জ বাজারে অবস্থিত অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুদল গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় খান্দার গ্রামের মৃত জাফর আলীর পুত্র আবুল কালাম (৬০) মারা যান। আবুল কালামের মৃত্যুর সংবাদে উত্তেজিত জনতা বৃহস্পতিবার রাতে গাগলার মোড় নামক স্থানে অবস্থিত বাড়ি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় প্রায় ৪/৫ টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। উত্তেজিত এলাকাবাসী শুক্রবার সকাল থেকে শাহগঞ্জ বাজারে অবস্থান নিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ করে গৌরীপুর – রামপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে৷ এতে উক্ত রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উক্ত রাস্তায় এখনও অবরোধ চলছে বলে জানা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে গাগলা ও খান্দার গ্রামবাসীর মাঝে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া কেন্দ্র করে শাহগঞ্জ বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বাজারে আসা লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে পালায় এবং বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট।
হামলাকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের সহযোগী মমতাজ উদ্দিন হীরাকে (২৭) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের অপর একটি কক্ষে অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান আশ্রয় নিলে সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুবুর মিয়া গাগলা গ্রামের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি আব্দুর রশিদের নিকট থেকে ‘খাট’ কিনেন। কাঠের দরদামকে কেন্দ্র করে দুজনের মাঝে গত ৩০ মে হাতাহাতি হয়। সুবুর মেম্বারের লোক নয়নের নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে কাঠমিন্ত্রী আব্দুর রাশিদকে ১ জুন শাসিয়ে আসে। এ নিয়ে মারামারিও হয়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার রাতে দুপক্ষকে নিয়ে অমীমাংসিতভাবে সালিশ শেষ হয়।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর সালিশ হওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় সালিশ বিলম্ব হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় আসরের নামাজের পর সালিশ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গাগলা গ্রামের চান মিয়ার পুত্র রাকিবুল ইসলাম (২৮) শাহগঞ্জ বাজারে আসলে খান্দারের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে মারধর করে। এর পরেই খান্দার ও গাগলার কতিপয় লোকজন সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হন। ইউনিয়ন পরিষদে ইটপাথর নিক্ষেপ করে এবং কুপিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পরিষদের অফিসকক্ষে ঢুকে গাগলা গ্রামের মমতাজ উদ্দিন হীরাকে কুপিয়ে পুরো অফিস রক্তাক্ত করেছে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদার জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় খান্দার গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে আবুল কালাম (৬০) নিহত হন। এ ছাড়া গাগলা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৮), মহিউদ্দিন বাদশার পুত্র মমতাজ উদ্দিন হীরা (২৭), আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র শেখ হালিম (৩৮) ও শাহজাহান (৩০) আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।