কেন্দুয়া(সংবাদ দাতা) সংবাদ দাতা
নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা এডহক কমিটি ছাড়াই চলছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এ অবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় তারাকান্দিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নাফের ছেলে হারেছ মিয়া জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিবরণে জানা গেছে, শতবর্ষী ও ঐহিত্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। শত বছর যাবত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অত্র অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম বর্তমানে খুবই ধীরগতিতে পরিচালিত হচ্ছে এবং প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজসে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। অথচ তা দেখার যেন কেউ নেই। সর্বশেষ গত ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় কাউরাট (শিমুলাটিয়া) গ্রামের মৃত কবীর উদ্দিন বেপারীর ছেলে তাজুল ইসলাম। এরপর থেকে অদ্যাবধি ম্যানেজিং কমিটি বিহীন চলছে বিদ্যালয়টি। তবে এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর শিক্ষা বোর্ড পূর্বের নিয়মিত কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬ মাসের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেন এবং এ কমিটির মেয়াদকালের মধ্যে একটি নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের কথা বলে দেয় শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু এডহক কমিটি তা করতে পারেনি। পরবর্তীতে গত ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর পুনরায় তাজুল ইসলামকেই সভাপতি করে আরও একটি এডহক কমিটি নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে এই এডহক কমিটির মেয়াদও শেষ। এ অবস্থায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম ও বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের ইচ্ছে মতোই চলছে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। এছাড়া নিয়মবর্হিভূতভাবে বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন ইসলামকে আজীবন দাতা সদস্য করেছেন এবং গোপনে রেজুলেশন করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা গাছ ও পুরাতন একটি টিনশেড ঘর বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার গুণগত মান নি¤œমুখি হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে সার্বিক উন্নয়ন কাজও।
তাই অবিলম্বে বিদ্যালয়ের এ সকল অনিয়ম-দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অভিযোগকারী হারেছ মিয়া।
তবে কমিটি না থাকায় তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রহিছ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন হল এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুন কমিটির জন্য বোর্ডে আবেদন করব এবং নতুন ভোটার তালিকা করে তারপর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করব। এছাড়া নিয়মবর্হিভূতভাবে বিদ্যালয়ের গাছ ও টিনশেড ঘর বিক্রিসহ অনিয়ম-দুর্নীতির কথা জিজ্ঞেস করলে এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
বিদ্যালয়টির সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সময়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। নিয়ম মেনেই তখন আইরিন ইসলামকে দাতা সদস্য করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো গাছ ও টিনশেড ঘর বিক্রি করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, এডহক কমিটির জন্য এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। এখন প্রধান শিক্ষক শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে নতুন কমিটি করবেন এবং নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া করবেন। তবে বিদ্যালয়ের গাছ, টিনশেড ঘর বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলমের সাথে কথা হলে ওই বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য আপাতত কোনো কমিটি নেই জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে দায়ের করা অভিযোগটির অনুলিপি পেয়েছি। কমিটির বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। সেটা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে করবেন। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশ দিলে অভিযোগটির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।