কেন্দুয়া ( নেত্রকোনা) সংবাদ দাতা
বিভিন্ন রকম সমস্যা গ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের খোঁজে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল। তারপর অসহায় এসব লোকজনকে খোঁজে বের করে তাদের নানারকম সমস্যা ও অসুবিধার কথা শুনছেন তিনি এবং তাদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা ও সহায়তা। ইউএনওর এমন মানবিক কাজে খুবই খুশি উপকারভোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ইউএনও কাবেরী জালাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারন্যান শহিদুল ইসলাম আকন্দ কল্যানকে সাথে নিয়ে গন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম চড়ে বেড়ান।
এ সময় তিনি ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে অসহায় লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। পাশাপাশি ওই ইউনিয়নটির একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজসহ প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ অবকাঠানোর চিত্রও প্রত্যক্ষ করেন।
একপর্যায়ে ইউএনও কাবেরী জালাল ছুটে যান ইউনিয়নটির বৈশ্যপাট্টা গ্রামে। এ গ্রামের মৃত রইছ উদ্দিনের স্ত্রী অসহায় ভূমি ও গৃহহীন বৃদ্ধা জাহারা বেগম। তিনি গ্রাম সমিতির নির্মাণাধীন একটি টিনশেড ঘরে বসবাস করে আসছেন। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে নূর জাহান অন্ধ। এ অবস্থায় মা-মেয়ে দুজন ভিক্ষা করে জীবন চালিয়ে আসছেন।
ইউএনও কাবেরী জালাল জাহান্নারা বেগমের সাথে কথা বলে তাদের সার্বিক খোঁজ নেন। এ সময় ইউএনও জাহান্নারা বেগমের হাতে কিছু খাদ্যসামগ্রী ও শীতবস্ত্র হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার কম্বল তুলে দেন। এছাড়া স্থানীয় কেউ জায়গা দান করলে জাহান্নারা বেগমকে সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন ইউএনও।
পরে বিকালে একই ইউনিয়নের মরিচপুর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ আবুল হাসেমের খোঁজ নিতে তার বাড়িতে ছুটে যান ইউএনও কাবেরী জালাল। পরে তাকেও শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী প্রদানের পাশাপাশী প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।
হঠাৎ বাড়িতে গিয়ে ইউএনও কাবেরী জালাল উপস্থিত হয়ে অসহায় এসব লোকজনের খোঁজ-খবর নেওয়ায় এবং তাদের সহায়তা প্রদান করায় খুবই আনন্দিত হন বৈশ্যপাট্টা গ্রামের বৃদ্ধা জাহান্মারা বেগম ও মরিচপুর গ্রামের বৃদ্ধ আবুল হাসেম। খুশি ইউনিয়নটির জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজনও।
অসহায় বৃদ্ধা জাহান্নারা বেগম বলেন, আমরার খবর নিতো ইউএনও স্যার বাড়িতে আইবো এইডে কহনও ভাবি নাই। উনি আইয়া আমরারে দেইখে খাওন দিছুইন, কম্বল দিছুইন। আল্লায় উনার ভালা করুক।
বাড়িতে এসে খোঁজ নিয়ে খাদ্য ও কম্বল দেওয়ায় ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মরিচপুর গ্রামের বৃদ্ধ আবুল হাসেমও।
গন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক আকন্দ কল্যান বলেন, আজ প্রায় সারাদিনই ইউএনও মহোদয় আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের খোঁজ নিয়েছেন। তাদের নানাবিধ সমস্যার কথা শুনেছেন এবং সমাধান করার চেষ্টা করছেন। কিছু লোকজনকে খাদ্যসামগ্রী ও কম্বল দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের একজন সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়েও একেবারে অসহায় মানুষের বাড়িতে হাজির হয়ে তাদের খোঁজ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের এই বিষয়টিকে আমি স্যালুট জানাই।
এ বিষয়ে ইউএনও কাবেরী জালাল বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণে কাজ করছে সরকার। শুধু তাই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত হতে যাচ্ছে। সরকারের সকল সেবা ও সহায়তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব থেকেই এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকার সরকারি সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় লোকজন খোঁজে বের করে তাদের মধ্যে সরকারি সেবা ও সহায়তা পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।