চলচ্চিত্রের ব্যস্ত নায়িকা ছিলেন তাঁরা। আর দর্শকের হৃদয়ের রানি। দর্শককে আনন্দ জোগানো এই শিল্পীরা একসময় নিজেদের সময় দেওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। কেউবা চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমী গল্পের দেখা না পেয়ে আগ্রহ হারাতে থাকেন। কারও-বা তৈরি হয় পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যা। তাঁরা এখন নিজেদের মতো করেই জীবন যাপন করছেন। চলচ্চিত্রের সোনালি অতীতের কথা মাঝেমধ্যে মনে হলেও সেসব তাঁদের খুব একটা ভাবায় না। এখনকার জীবন নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতে চান।
যে কারণে দেশ ছাড়েন অঞ্জু ঘোষ
‘বেদের মেয়ে জোছনা’কে ভুলে যাওয়ার উপায় নেই বাঙালির। উপায় নেই অঞ্জু ঘোষকে ভুলে যাওয়ার। সিনেমার নায়িকা হয়েও একবার গান করেছিলেন, যা এখনো মানুষের মনে পড়ে। কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে তিনি গেয়েছিলেন ‘ও রে ও বাঁশিওয়ালা’ গানটি। সুপারহিট সিনেমা ও সুপারহিট গানের সেই নায়িকা দেশ ছেড়েছেন অনেক দিন হলো।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন অঞ্জু ঘোষ। প্রথম সিনেমা তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘আশীর্বাদ’। তবে প্রেক্ষাগৃহে প্রথম মুক্তি পায় এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’। গত শতকের আশির দশক থেকে অভিনয়জীবন শুরু করা অঞ্জু ঘোষ ১৯৯৮ সালে যখন দেশ ছাড়েন, এরই মধ্যে অভিনয় করে ফেলেন তিন শতাধিক ছবিতে। দুই দশক পর ২০১৮ সালের শেষ দিকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
কেন দেশ ছেড়েছিলেন, সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তবে মনে যে কষ্ট ছিল, সেটা যে কেউ বুঝবে। অঞ্জু ঘোষের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে জানা গেছে, কয়েকজন পরিচালক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উত্ত্যক্ত করতেন অঞ্জুকে। এ কারণেই দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।
প্রেমের গল্পে ক্লান্ত ছিলেন শাবনাজ
শাবনাজ। ছবি: সংগৃহীতসিনেমায় কাজ করতে গিয়ে সহশিল্পী ও সে সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নাঈমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে শাবনাজের। তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, ‘বিষের বাঁশি’ ছবির কাজ করতে গিয়েই মূলত দুজনের প্রেমের শুরু। আর ‘লাভ’ ছবির কাজ করতে গিয়ে ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তবে কেউ কাউকে নিজেদের ভালো লাগার বিষয়টি বুঝতে দিতে চাইতেন না। ছবিতে অভিনয়ের তিন বছরের মাথায় শাবনাজ ও নাঈম দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁরা বিয়ে করেন।
বিয়ের পর দুই বছর ছবিতে অভিনয় করেছেন শাবনাজ। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা ২৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর বেশির ভাগ ছবিই ছিল প্রেমের গল্পের। মনে মনে বৈচিত্র্যময় গল্পের খোঁজে ছিলেন। কিন্তু শিল্পীর মন কেউ বোঝেনি। তাই আর পুনরাবৃত্তি না করে নিজেকে সরিয়ে নিতে থাকেন। শাবনাজ বললেন, ‘একঘেয়ে গল্প। সবই প্রেমের। আমি শুধু নায়িকা হয়ে থাকতে চাইনি, শিল্পী হতে চেয়েছিলাম। তাই বৈচিত্র্যময় গল্প খুঁজছিলাম। পাইনি। একটা সময় সরে আসি।’
সংসারে মনোযোগ দেন শাবনাজ। সিনেমা ছাড়ার তিন বছর পর ১৯৯৯ সালে অবশ্য তাঁর অভিষেক হয় টেলিভিশন নাটকে। প্রথম নাটক ‘আকাশ কুসুম’। এরপর আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ২০০৫ সালে দীর্ঘ বিরতির পর আবার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনুরোধ আসে শাবনাজের কাছে। বরেণ্য অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামানের অনুরোধ উপেক্ষা করেননি তিনি। কাজ করেছিলেন আজিজুর রহমানের ‘ডাক্তার বাড়ি’ ছবিতে। তারপর আর কোথাও দেখা যায়নি তাঁকে। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপও নেই। পেছন ফিরে তাকাতেও চান না। এতকাল পর অবশ্য এ বছর এসে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তিনি। অভিনয়ে ফিরবেন কি না, বলতে পারেন না তিনি নিজেও।